নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: ভারত নিছক একটি ভূখণ্ড মাত্র নয়, ভারত একটি সংস্কৃতি, আর ওই সংস্কৃতি যারা মেনে নিতে পারেনি, তারা আলাদা দেশ গড়ে এখন থেকে চলে গেছে, আর মেনে নিয়ে যারা ১৯৪৭’ র আগস্টের পর এখানে রয়ে গেছে , তারা সকলেই ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ, বলে মনে করেন মোহন ভগবত।
রবিবার, এখানকার সাই স্টেডিয়ামে রাজ্যের মধ্যাঞ্চলের ক্যাডারদের সম্ভাষণ করতে গিয়ে ভাগবত বারে বারে বিবিধের মাঝে মিলনের সুর বেঁধে দিলেন, যা অবশ্য ভোট রাজনীতির স্বার্থে বিভাজনের রাজনীতি পণ্য করে চলা বিজেপি নেতাদের অস্বস্তির কারণ হয়েছে। এদিন আরএসএসের মুক্ত সভায় সাধারন ক্যাডারদের মতোই স্টেডিয়ামে এদিন শ্রোতার ভূমিকায় এসেছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আর প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। জাতপাত, বিভাজন নিয়ে ভাগবতের স্পষ্ট ইঙ্গিতবাহী বক্তব্যের সময় দৃশ্যতই তাদের মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখা যায়।
ভাগবত এদিন তার ৪০ মিনিটের ভাষণের অনেকটা জুড়েই বিভাজন রুখে দেশের চিরন্তন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সযত্নে রক্ষা করার কথা বলেন। তিনি বলেন, “একেক জনগোষ্ঠীর ভাষা, ধর্ম আলাদা আলাদা হতেই পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমাদের সকলের সংস্কৃতি এক। ব্রিটিশরা এদেশে আসার বহু আগে থেকেই আমাদের মধ্যে বিবিধতা ছিল। কিন্তু, আমাদের সকলের সংস্কৃতি ছিল এক – তাই, এই ভারত সংস্কৃতিকে মেনে চলা সব মানুষই হিন্দু। এর কোনো অন্যথা যেমন নেই, তেমনি এর কোনো বিকল্পও নেই।” আর, নেই বলেই, ভাগবতের নিদান, “সমাজের বৃহত্তর অংশের দায়িত্বই হলো দুর্বল অংশকে সাথে নিয়ে চলা। তবেই হবে আসল উন্নয়ন।” দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখে বারে বারে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ বলে বুক চাপড়ালেও, তার জমানায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অহরহ সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতনের ঘটনা আরএসএসের সরসংঘ চালক যে আদৌ ভালো ভাবে নিচ্ছেন না, তা এদিন তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের বিবশ অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে ভাগবত বলেন, “উনি ট্রেনে সাধারন যাত্রীদের সাথে সফর করে সংকটকালে দেশের সামরিক নীতি নির্ধারণে সাধারন মানুষের রায় যাচায় করে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। মনে রাখবেন, কোনো নেতা নয়, দেশ চালায় জনগণ। নেতা জনতার চেয়ে বড়ো নয়।”

তিনি সাধারণ ক্যাডারদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেন, “আজ এই মাঠে হয়ত অনেক বাধা অতিক্রম করে নিজেদের গাঁটের কড়ি খরচ করে সংঘের সদস্যরা সভায় এসেছেন। যারা ভারত নামের এই স্বভাব মেনে নিয়েছেন তাদের বুঝতে হবে – ভারতের এই স্বভাব হল বিশ্বের ভিন্ন ভিন্নতাকে মেনে চলা। সবারই আলাদা আলাদা বিশেষতা রয়েছে। কিন্তু সেই বিভেদের মাঝে একতাই ভারত। ইন্দো- আর্য সভ্যতার আগে থেকে এটা চলে আসছে। সবার ভিন্নতাকে সম্মান দিয়ে বাঁচো। ঐক্য বজায় রাখো। এটাই বড় বিষয়। নিজে বড় হলে অন্যকে বড় করতে হবে – সেটাই বীরত্ব। ভারতে রাজা-মহারাজাদের শাসন চলেনি। এখানে অনেকে ধনবান আছেন। কিন্তু তাদের কথাই শেষ কথা নয়। কে কত বড় ধনবান, কত কামাই করেন সেটাতে ভারত চলে না। ভারতে এমন ব্যক্তিত্বও রয়েছেন, যিনি নিজে এক টাকাও কামাননি। সেই স্বামী বিবেকানন্দের নাম সকলে মানে। এটাই ভারতের স্বভাব। হিন্দু সমাজ এটাই। হিন্দু সমাজ এবং ভারত সংস্কৃতি, ভারত এক। আজকের অবনতির সময়েও এই কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। শিক্ষিত, শ্রেষ্ঠ সে, যিনি মহিলাদের মায়ের রূপে দেখেন, পরের সম্পত্তিতে লোভ করেন না, নিজে রোজগার করে খান। কোনো দেশের সমাজের গুণগত মানই দেশের মান তৈরী করে। দেশকে তৈরীর করার আগে সমাজকে তৈরী হতে হয়। নেতা-মন্ত্রী, শাসক, প্রশাসক তৈরী হবে কিন্তু দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করে সমাজ।” সম্প্রতি মহাকুম্ভের প্রয়াগরাজে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সোৎসাহে তীর্থযাত্রীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার ভিডিও সোস্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ায়, খানিকটা হলেও বেকায়দায় পড়ে বিজেপির বিভাজনের কৌশল। তার পরেই, ভাগবতের এদিন ঐক্য অখণ্ডতার পক্ষে প্রকাশ্যে সোচ্চার হওয়া ২০২৬ এর বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের রাজনৈতীক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।






