দুর্গাপুরঃ আজ বিজয়া দশমী। গোটা দেশ জুড়ে দশেরা উপলক্ষ্যে তোড়জোড় পুরোদমে। ব্যতিক্রম নেই শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরও। প্রত্যেক বছরের মতো এবছরও দুর্গাপুরের বি-জোনে ঐতিহ্যবাহী রাজীব গান্ধী স্মারক ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে দশেরা উৎসব। দুস্ট রাবনের বধ করে হবে অশুভ শক্তির বিনাশ। অখিল ভারতীয় সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে এই রাবন দহন অনুষ্ঠানে প্রত্যেক বছর সাক্ষী থাকেন কয়েক হাজার মানুষ। দুর্গাপুর তো বটেই দুর্গাপুরের বাইরে থেকে বহু মানুষ ভিড় জমান রাজীব গান্ধী ময়দানে। কিন্তু এবছর দশেরা রাজীব গান্ধী ময়দানে অখিল ভারতীয় সাংস্কৃতিক পরিষদ পরিচালিত এই রাবন দহন অনুষ্ঠান নিয়ে ক্রমশই বিতর্ক দানা বাঁধছে। কারণ, রাজীব গান্ধী ময়দানের ঠিক যে জায়গায় দশেরা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে তার চারপাশে রয়েছে প্রচুর প্রাপ্তবয়স্ক গাছপালা। আর সেই গাছপালার গা ঘেঁষেই তৈরী করা হয়েছে রাবন, কুম্ভকর্ণ ও ইন্দ্রজিতের প্রতিমূর্তি। রামের ছোঁড়া অগ্নি বান থেকেই ধ্বংস হয় রাবন, ইন্দ্রজিৎ ও কুম্ভকর্ণের কুশপুতুল তৎসহ আতসবাজির প্রদর্শণী। কিন্তু,
বর্তমানে যে জায়গায় এই কুশপুতুলগুলি লাগানো হয়েছে তার মধ্যে একটি কুশপুতুলের অর্ধেক অংশ ঢুকে গিয়েছে একটি ৩০ বছর পুরনো প্রাপ্তবয়স্ক তেতুল গাছের ভেতরে। সেই কুশপুতুলে আগুন লাগানো মাত্রই দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করবে এক নিস্পাপ প্রাণ (উক্ত তেঁতুল গাছটি)। যেখানে পরিবেশ বাঁচাও, গাছ বাঁচাও, গাছ লাগাও এর মতো বড় বড় বাণী রাস্তায় রাস্তায় আমাদের নজরে আসে সেখানে হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনেই আজ পুড়ে ছাই হতে চলেছে একটি আস্ত ৩০ বছর পুরনো প্রাপ্তবয়স্ক তেতুল গাছ। তাসত্ত্বেও এই ঘটনা এখনও কারোর নজরেই পড়ে নি। শিল্পাঞ্চলের আনাচে-কানাচে বহু পরিবেশবিদ বা পরিবেশবন্ধু হিসেবে পরিচিত একাধিক মানুষের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হলেও আজকে এই পরিস্থিতিতে তারা কোনও অজানা কারনে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কিংবা নজর এড়িয়ে গেছেন। ভাবতেও অবাক লাগে এরকম এক উৎসব আয়োজন করতে অনেকগুলি সরকারী অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। যেমনঃ পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি, অগ্নিনির্বাপক দফতরের অনুমোদন, গ্রাউন্ড অনুমোদন সর্বোপরি পরিবেশ দফতরের সবুজ সংকেত লাগে, কিন্তু কেন বা কোন অজানা কারণে এতগুলি দফতরের মধ্যে কারোর কাছেই সময় হল না সরেজমিনে তদন্ত করে দেখার যে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের নামেই নির্বিচারে চলছে সবুজ ধ্বংসের পালা। এইভাবেই নাকি অশুভ শক্তির ওপর শুভ শক্তির জয়োল্লাস। ছিঃ। এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও অতিথিবৃন্দদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সিইও এবং তাঁর বিভাগেরই বহু নামী-গুণী আধিকারিকরা সঙ্গে থাকবেন দুর্গাপুরের পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতৃত্বরাও। আর এইসমস্ত মানুষের সামনেই জ্যান্ত পুড়তে হবে ৩০ বছর ধরে নিঃস্বার্থ সেবায় রত প্রাচীন ওই আস্ত তেঁতুল গাছটিকে আর আড়ালে থেকে হাসবেন স্বয়ং রাবন তথা দুস্ট শক্তি। কারণ, আমাদের অজান্তেই অশুভ শক্তির বিনাশ করতে গিয়ে আমরাই তো শুভ শক্তির বিনাশ করতে চলেছি। জানি না, এখন সোশ্যাল মিডিয়ার এমন বাড়বাড়ন্তের দিনেও এইসমস্ত ছবি, ভিডিও কেন ভাইরাল হয় নি ? কেনই বা এই অনুষ্ঠানের
আয়োজক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষের চোখ সব দেখেও নিশ্চুপ ? তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণেই ভয়ে কেউ কিছু করার সাহস দেখাচ্ছেন না বা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন না একটি আস্ত গাছকে জ্যান্ত জ্বালানোর হাত থেকে? এও তো একপ্রকার হত্যাই ? এই হত্যার দায় কার ? চ্যানেল এই বাংলা কোনও রকম ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার উদ্দেশ্যে এই খবর তুলে ধরে নি, তুলে ধরেছে কেবল এক নিস্পাপ প্রাণকে বাঁচানোর আবেদন নিয়ে। দেখা যাক, দুর্গাপুরের মানুষের মধ্যে এখনও কোনও প্রতিবাদী আছেন কিনা, যারা আমাদের এই প্রতিবেদন পড়ার পর সরেজমিনে গিয়ে হত্যালীলার প্রতিবাদ করবেন বা দুর্গাপুরের তাবড় তাবড় প্রশাসনিক কর্তারাও দুর্গাপুজোর শীতঘুম ভেঙে একটি নিস্পাপ ৩০ বছর পুরনো প্রাপ্তবয়স্ক তেতুল গাছটি বাঁচাতে এগিয়ে আসেন কিনা। চ্যানেল এই বাংলার ক্যামেরা সজাগ থাকবে অনুষ্ঠানটি চলার সময়ও, সেই গাছটির ভবিতব্য দেখার অপেক্ষায়।