দুর্গাপুরঃ এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালের খবরের জের আর সেই সঙ্গে দুর্গাপুরবাসীর মিলিত প্রতিবাদ। ফলস্বরূপ, জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেল এক অবলা সবুজ প্রাণ। দশেরা উপলক্ষ্যে রাবন দহনের জেরে আগুনে পুড়ে অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেল ৩০ বছরের পুরনো প্রাপ্তবয়স্ক এক তেঁতুল গাছ। শুক্রবার অর্থাৎ দশেরা উৎসবের দিনেই এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালের তরফে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানেই আমরা সর্বপ্রথম এই ঘটনা সর্বসমক্ষে নিয়ে আসি। ঘটনা ছিল, দুর্গাপুরের বি-জোনে রাজীব গান্ধী ময়দানে দশেরা উৎসব উপলক্ষ্যে রাবন, কুম্ভকর্ণ ও ইন্দ্রজিতের কুশপুতলিকা দাহ ও আতসবাজির প্রদর্শণীর আয়োজন করেছিল অখিল ভারতীয় সাংস্কৃতিক পরিষদ। প্রত্যেক বছরের মতো এবছরও সেই রাবন দহন দেখতে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হওয়ারও কথা ছিল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও সকলের অলক্ষ্যেই রাবন দহনের কুশপুতলিকাগুলির একেবারে গা ঘেঁষেই ছিল বেশ কিছু প্রাপ্তবয়স্ক গাছপালা। সেই কুশপুতুলগুলির একটির প্রায় অর্ধেক অংশ একটি বিশাল তেঁতুল গাছের ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় সেখানে আগুন লাগলে সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যেত গাছটি। এই ঘটনা দুর্গাপুরের মানুষের নজরে আনতেই এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালের তরফে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। মুহুর্তে সোশ্যাল সাইটগুলিতে এই খবর চাউর হতেই দুর্গাপুর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠতে থাকে। ফেসবুক থেকে শুরু করে অন্যান্যা সমস্ত সোশ্যাল সাইটে ঘটনার তীব্র নিন্দা শুরু হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ব্যাপক চাপে পিছু হটতে বাধ্য হয় উদ্যোক্তারা। আগুন ও আতসবাজির জেরে যাতে গাছটির কোনোরকম ক্ষতি না হয় তার জন্য একটি কুশপুতুলিকায় শুধুমাত্র সাংকেতিক আগুন দিয়েই তা দ্রুত নিভিয়ে দেওয়া হয়। ফলে গাছটির ডালপালার কিছু অংশ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শেষমুহূর্তে প্রাণে বেঁচে যায় তেঁতুল গাছটি। যদিও এরপরেও মানুষের মনে ক্ষোভের আগুন এখনও জ্বলছে। প্রশ্ন উঠছে, কিভাবে আশেপাশে এলাকা খতিয়ে না দেখে এত বড় একটা অনুষ্ঠান আয়োজনের সরকারী ছাড়পত্র পেয়ে গেল উদ্যোক্তারা ? তাহলে কী সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে ? নাকি দুর্গোৎসব আর শীত ঘুমের ব্যস্ততায় সমস্ত তদন্তই হিমঘরে লাল ফিতের ফাঁসে আটকে পড়ে রয়েছে ? সেই একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি – গাফিলতি। যে গাফিলতিই শুক্রবার রাতে পাঞ্জাবের অমৃতসরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় কেড়ে নিয়েছে ৬০-রও বেশী নিরীহ প্রাণ। অযাচিতভাবেই সেই দুর্ঘটনার কারণও সেই রাবন দহন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই। আজ তো শুধু অবলা এক গাছের ওপর দিয়ে এই ঘটনার চাকা প্রবাহিত হল, কে বলতে পারে প্রশাসনিক এই গাফলতির কারণেই দুর্গাপুরের বুকে ঘটবে না কোনও বড়সড় দুর্ঘটনা ? এরপরেও কী টনক নড়বে প্রশাসনের, উত্তর অজানা।