সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- একজন ভক্ত একবার প্রশ্ন করেন যে,“ ঈশ্বরকে নিবেদন করলে কর্ম আমাদেরকে বন্ধনে ফেলবে না এমনটা বলা হয়, কিন্তু আমি যদি কাউকে খুন করে কাজটা ঈশ্বরকে নিবেদন করি, তাহলেও আমাকে জেলে যেতে হবে, ফাঁসিও হবে। তাহলে ঈশ্বরকে কর্মফল নিবেদন কিভাবে করতে হয়? কীভাবে করবো কর্মযোগ?” এর উত্তরে স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ বলেন,“এর সুন্দর উদাহরণ দেখিয়েছেন গিরিশ ঘোষ।”
এরপর মহারাজ পুরো ঘটনা বিবৃত করে বলেন,“তাঁর ছেলে যখন মৃত্যুশয্যায়, ডাক্তার জবাব দিয়ে গিয়েছেন, স্বামীজি কয়েকজন গুরুভাইকে নিয়ে দেখতে গেছেন। অসুস্থ ছেলে বিছানায় শুয়ে আছে, খাটের চারদিকে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই। স্বামীজি হঠাৎ বলে উঠলেন: জি-সি তোমার ছেলে এমন অবস্থায়, কিন্তু তোমার চোখে জল নেই! গিরিশ ঘোষ উত্তর দিলেন — আমার বুক ফেটে কান্না আসছে, কিন্তু আমি তো কাঁদতে পারি না। আমি যে ঠাকুরকে বকলমা দিয়েছি। তাঁর পায়ে সব যে নিবেদন করে দিয়েছি।”
এই হলো ঈশ্বরকে নিবেদন করা। কাজের দু’রকম ফল – জাগতিক ফল ও মানসিক ফল। প্রথমটি হবেই, কিন্তু ঈশ্বরকে নিবেদন করলে দ্বিতীয়টি হবে না। পরেরটিকে সহ্য করার শক্তি আসে। আসলে, ঈশ্বরকে কর্মফল নিবেদন করা হলো কর্মযোগ। জ্ঞান-ভক্তি-যোগের মতো এটাও এক সাধনা। অভ্যাস করতে হয় এটা। এর অর্থ কাজের ফলে ভাল-মন্দ যাই আসুক না কেন নিজের মনকে শান্ত রাখা। সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বা ব্যর্থতায় হতাশ না হওয়া। যেটাই আসুক সেটাকে ঈশ্বরের দান হিসাবে গ্রহণ করা।





