সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণরোগ ক্যান্সার। ছোট থেকেই চলছে তার সঙ্গে লড়াই। সাথে নিত্য সঙ্গী দারিদ্রতা। কিন্তু সেসব বাধা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৭০ নম্বর পেয়ে রীতিমতো সবাইকে অবাক করে দিয়েছে দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অম্বিকানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিজিৎ প্রামানিক।
বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের অম্বিকানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীদামশোলের বাসিন্দা অভিজিৎ। মাত্র দশ বছর বয়সে খাদ্যনালীতে টিউমার ধরা পড়ে তার। চিকিৎসকরা জানান ক্যান্সারের বিষ ছড়িয়ে পড়েছে শরীরে। সেই থেকেই শুরু ছোট্ট অভিজিতের মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই। তার সঙ্গে দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই তো রয়েইছে। বাবা গৌতম প্রামাণিক স্থানীয় অম্বিকানগর বাজারে একটি ছোট সেলুন চালান। রোজগার সামান্য। একদিকে শারীরিক অসুস্থতা অন্যদিকে দারিদ্রতা। জীবনের ছুঁড়ে দেওয়া এই চ্যালেঞ্জের কাছে হার না মেনে বরং লড়াই করে চলেছে অভিজিৎ।
অভিজিতের মা ঝুমা প্রামাণিক জানান, ছেলের পড়াশোনার প্রতি খুব ঝোঁক। ছেলে সুস্থ থাকলে যে মেধা তালিকায় স্থান করে নিত সে বিষয়ে নিশ্চিৎ তিনি। শরীর অসুস্থ থাকায় ভালো করে পড়াশুনা করা সম্ভব হয়নি অভিজিতের পক্ষে। মাঝে মাঝেই শারীরিক অসুস্থতার জন্য পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছে। এমনকি গৃহ শিক্ষকের বাড়িতে পড়ার সময় শরীর অসুস্থ হওয়ায় পড়া ছেড়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে। তবে অভিজিতের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, জিদ ও পড়াশুনার প্রতি ভালোবাসাই তাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে বলে মনে করছেন অভিজিতের বাবা মা।
অভিজিতের বাবা গৌতম প্রামাণিক জানান, ছোট বেলায় যখন তার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে ভিন রাজ্যে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকরা একরকম জানিয়েই দিয়েছিলেন কিছু করা যাবে না। বরং বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই থেকে বিষ্ণুপুরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করাচ্ছেন ছেলের। এদিকে সাংসারিক অনটনের জেরে ছেলেকে ভালো স্কুলেও ভর্তি করতে পারেননি। পড়াশুনার জন্যও সেভাবে আর্থিক সহায়তা করতে পারেননি। কিন্তু ছেলে হাল ছাড়েনি সে মন দিয়ে পড়াশুনা করে গেছে বলে জানান তিনি। কিন্তু ভবিষ্যতে ছেলের চিকিৎসার ও পড়াশোনার খরচ কিভাবে চালাবেন ভেবে উঠতে পারছেন না এই কৃতি ছাত্রের বাবা।
বর্তমানে অভিজিত শরীরিকভাবে খুবই দুর্বল। মাঝেমধ্যেই পেটে ব্যথা সহ বিভিন্ন রকম শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে বাইরে গিয়ে কোনো ভালো কলেজে পড়াশুনা করা সম্ভব নয় তার পক্ষে। তাই স্থানীয় কলেজেই বাংলায় নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশুনা করতে চায় অভিজিৎ। তার ইচ্ছা ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে সরকারের উচ্চপদে থেকে দেশের জন্য কিছু করা। আপতত সেই স্বপ্ন সফল করতে লড়াই জারি রেখেছে রানিবাঁধের এই লড়াকু ছেলে।
আত্মীয় পরিজন প্রতিবেশীরা জানান পড়াশুনায় ভালো হওয়ার পাশাপাশি অভিজিত খুব ভালো স্বভাবের ছেলে, খুব মিশুকে। চিকিৎসার পাশাপাশি পড়াশোনার খরচ চালানো ওর বাবার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার যদি এই কৃতি পড়ুয়ার পাশে দাঁড়ায় তাহলে আগামীতে নিজের স্বপ্ন পূরণ করে দেশের একজন সফল নাগরিক হয়ে উঠতে পারবে তাদের গ্রামের এই কৃতি ছেলে।





