নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: গরীব ঘরের যুবতী, গৃহবধূতো বটেই, নাবালিকাদেরও আটকে রেখে দিনের পর দিন চলছিল যৌন শোষণ। এরমধ্যে কাউকে কাউকে একেক দিনে তিন থেকে চারবারও খাটানো হচ্ছিল নগদ টাকা উপার্জনের জন্য।
বর্ধমান শহরের নবাবহাটের হোটেলগুলিতে মধুচক্রের নেপথ্যের ঢালাও এই কারবার এবার ভাবিয়ে তুলছে তদন্তকারীদেরও।
গত মঙ্গলবার বর্ধমানের নবাবহাট সংলগ্ন জাতীয় সড়কের ধারে একটি হোটেলে পুলিশের ডিএসপি (হেডকোয়ার্টার) দেবাশীষ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বর্ধমান মহিলা থানার পুলিশকে সাথে নিয়ে অভিযান চালিয়ে হোটেল থেকে এক নাবালিকা ও চার মহিলাকে উদ্ধার করার পাশাপাশি হোটেলের ম্যানেজার সহ চারজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে।
সেখান থেকে ধৃত অমিত দত্ত ও দুষ্মন্তকুমার ধীর-এর বাড়ি ওড়িষ্যায়। অন্যদিকে, আরেক ধৃত প্রভাত কুমার দাসের বাড়ি বর্ধমান থানার আমার গ্রামে এবং আরেক অভিযুক্ত হাসিবুর রহমানের বাড়ি রায়না থানার বহরমপুরে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ইম্মোরাল ট্রাফিক অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারা ও পকসো আইনে একটা মামলা রুজু করা হয়েছে। বুধবার ধৃতদের বর্ধমানের পকসো আদালতে পেশ করা হয়। একই সঙ্গে নাবালিকা ও চার মহিলাকেও আদালতে হাজির করে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে দুষ্মন্ত ও অমিতকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতের আবেদন জানায় পুলিশ। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন পকসো আদালতের বিচারক দেবশ্রী হালদার। বাকি দুজনকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ১৬ই জুন ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। একই সাথে আদালতের পক্ষ থেকে উদ্ধার করা নাবালিকাকে হোমে পাঠানোর ও চার মহিলাকে বন্ডে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় আদালত।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নবাবহাটের জাতীয় সড়কের ধারে থাকা এই হোটেলটিতে দীর্ঘদিন ধরে মধুচক্রের আসর বসানো হচ্ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই হোটেলে হানা দেয় পুলিশ। হোটেল রুম থেকে এক নাবালিকা সহ চার মহিলাকে উদ্ধার করার পাশাপাশি হোটেলের ম্যানেজার সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সাথে তদন্তের স্বার্থে হোটেলের রেজিস্টারটিও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ এবং হোটেল থেকে আপত্তিকর বহু জিনিসপত্রও বাজেয়াপ্ত করা হয়। ডিএসপি দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, “টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়েদের এনে এক প্রকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যৌন শোষণ চলতো বলে তদন্ত নেমে জানতে পারা গেছে। আমাদের অভিযান লাগাতার চলবে।” ওই হোটেল থেকে নগদ ৩৮,৩০০ টাকাও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে।
এদিকে শহরের স্টেশন সংলগ্ন কিছু হোটেলে এবং কয়েকটি নামী হোটেলেও কৌশলে যৌণ কারবার চলছে। সেখানে দিনের বেলায় হুগলির চন্দননগর, শ্রীরামপুর, ব্যান্ডেল থেকে ভাড়া খাটতে আসা যুবতী গৃহবধূদের পাশাপাশি নিয়মিত আসছে কালনা, কাটোয়া এবং বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের কিছু মহিলা, বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি আরো জানায়, দুর্গাপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কিছু মেয়েও নাকি মাঝেসাঝে পকেটমানির জন্য কাস্টমাদের গাড়িতে চেপে এইসব দামি হোটেলে আসে আর ফিরে যাচ্ছে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই। “ওইসব এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে,” বলে পুলিশ জানিয়েছে।





