নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ– এবার গরু পাচারকারী সন্দেহে মারধরের ঘটনায় সরব হলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। দুর্গাপুর থেকে অভিযুক্ত বিজেপির যুব মোর্চার নেতাকে গ্রেফতারের ডেড লাইন বেঁধে দিলেন ভাঙরের বিধায়ক। এদিন দুর্গাপুরের জেমুয়ায় আক্রান্তদের সাথে কথা বলে আগামী সাত দিনের মধ্যে মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার নাহলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামাম হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার জেমুয়া এলাকার বেশ কয়েকজন একটি পিকআপ ভ্যানে করে বাঁকুড়া থেকে গরু নিয়ে আসছিলেন। তাদের দাবি কৃষিকাজের জন্য ওই গরু কিনে আনা হচ্ছিল। পথে কোকওভেন থানার গ্যামন ব্রিজের কাছে তাদের গাড়ি আটকায় বিজেপির যুব মোর্চা নেতা পারিজাৎ গঙ্গেপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপির কর্মীরা। অভিযোগ গরু পাচারের অভিযোগে গাড়ি থেকে চারজনকে নামিয়ে মারধরের পাশাপাশি কান ধরে উঠবোস ও কোমরে দড়ি বেঁধে রাস্তায় হাঁটানো হয়। ঘটনার প্রতিবাদে ওইদিনই কোকওভেন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “আমার বিধানসভা এলাকার কিছু চাষী গরু নিয়ে আসছিলেন চাষের কাজের জন্য। তাদের আটকে মারধর করা হয়েছে। লুটপাট চালানো হয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছিলাম। পুলিশ ২৪ ঘন্টার মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।”
শুক্রবার রাতে দুর্গাপুরের দুই এলাকা থেকে দুই বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতারের কথা জানান এডিপিসি’র কমিশনার সুনীল কুমার। শনিবার ধৃত দুজনকে মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ। অন্যদিকে এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বিজেপি যুবনেতা সহ অন্যান্যদের খোঁজ চলছে বলেও জানান সুনীল চৌধুরী।
এরই মধ্যে শনিবার বিকেলে আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করতে দুর্গাপুরে পৌঁছন ভাঙরের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। তিনি আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন,”সময়মতো পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়নি। দু’ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চলেছে থানা থেকে ঢিল ছোঁরা দুরত্বে। বারংবার পুলিশ সম্প্রীতির বাতাবরণকে ঠিক রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কবরস্থানে, শ্মশানে যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করতে হবে।” অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করে তিনি বলেন, “তাঁর দলের যুব নেতার বিরুদ্ধে শুভেন্দু বাবু কোনো মন্তব্য করলেন না কেন? এই ঘটনায় ধর্মীয় রং লাগানোর চেষ্টা হলেও আমরা সেটা করতে দেব না। যদিও বিভিন্নভাবে ধর্মীয় উস্কানিমূলক মন্তব্য করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবুও আমরা এই ব্যাপারে সংযত থাকব, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করব।”
অন্যদিকে ভাঙরের বিধায়ককে এদিন সমর্থন জানিয়ে তৃণমূল জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “এই অন্যায় ঘটনার সবাই বিরোধিতা করবে। সেই জন্যই প্রতিবাদে নেমেছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীও। সেই জন্যই উনি ছুটে এসেছেন। অন্যায় হলে তো সবাই প্রতিবাদ করবে।”
যদিও এই ঘটনায় দুর্গাপুরের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই এদিন তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে দুর্গাপুরের শান্ত মাটিতে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করেন। বিজেপি ছেড়ে কথা বলবে না বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সব মিলিয়ে গরুকাণ্ডে শিল্পাঞ্চল জুড়ে রাজনৈতিক তরজা এখন তুঙ্গে।





