বিশেষ প্রতিবেদন, দুর্গাপুরঃ রয়্যাল এনফিল্ড, কেটিএম, পালসার, অ্যাভেঞ্জার আরও কত কি। ভাবছেন হঠাৎ করে বিভিন্ন সংস্থার বাইকের নাম দিয়ে কী হচ্ছে। আসলে উপরিউক্ত এই সমস্ত নামীদামী সংস্থার বাইকের কারণেই প্রাণ ওষ্ঠাগত দুর্গাপুরবাসীর। এই সমস্ত উচ্চ আওয়াজসম্পন্ন শো-কল্ড মডিফায়েড গাড়ির দানবীয় গোঙ্গানি শহর দুর্গাপুরের মাথাব্যাথা হয়ে উঠেছে। একটু খোলসা করেই বলা যাক। শীতের সন্ধ্যা একটু তাড়াতাড়িই নামছে ইদানীং। আর এই সন্ধ্যা নামতেই দুর্গাপুর শহরজুড়ে উড়ে এসে জুড়ে বসছে বাইক বাহিনী। ২২ থেকে ৩০ বছর কিংবা তার থেকে হয়তো কারো কারোর বয়স আরও কম। মাথায় হেলমেট ছাড়ায় ৩০ থেকে ৩৫টি বাইক চোখের নিমেসে শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে গতির নেশায়। আর এই বিপদসংকুল রেসিংয়ের জন্য এই সমস্ত বাইক আরোহীরা বেছে নিচ্ছে দুর্গাপুরের বিভিন্ন প্রান্তে সদ্য গড়ে ওঠা মসৃণ রাস্তা। একদিকে মসৃণ রাস্তা আর অন্যদিকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মডিফায়েড বাইক – দুইয়ের সংযোগে ক্রমে দুর্গাপুরবাসী সিঁদুরে মেঘ দেখছে। কারণ, সন্ধ্যা নামলেই দুর্গাপুরের স্টীল টাউনশিপের শরতচন্দ্র এভিনিউ, গান্ধী মোড় তথা এন আই টি রোড, ভগত সিং মোড় থেকে শুরু করে আড়া-কালীগঞ্জ ঝাঁ চকচকে রাস্তা দখলে চলে যাচ্ছে বাইক বাহিনীর। ঝড়ের বেগে বাইক আর সেই সঙ্গে বিপজ্জনক কসরত ক্রমে বিপদ বাড়াচ্ছে নিরীহ পথচারীদের। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে কেন কোথায় প্রশাসন? কোথায় পুলিশ? পরিবেশ দূষণ, শব্দদূষণ, দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা নিয়ে বছরের পর বছর, বান্ডিল-বান্ডিল কাগজে বিস্তর লেখালেখি চলছে কিন্তু আদপে তা যে কতটা ঠুনকো তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে এই বাইক বাহিনীর অত্যাচার। সরকারী তরফে বাইক কিংবা চার চাকা গাড়িতে এয়ার হর্ন, উচ্চ আওয়াজসম্পন্ন সাইলেন্সার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে বহু আগে, তাহলে এই সমস্ত লক্ষাধিক টাকার দামী দামী গাড়িতে কী করে এয়ার হর্ন ও বিকট আওয়াজের সাইলেন্সার লাগানোর ছাড়পত্র পাচ্ছে ক্রেতারা? কোন দোকান থেকেই বা এইসমস্ত জিনিস কেনা-বেচা চলছে তার কোনও উত্তর কি আছে প্রশাসন কিংবা পুলিশের কাছে? না থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ বড় কোনও দুর্ঘটনা কিংবা প্রাণহানি না হলে তাদের যে শীত ঘুম ভাঙবে না। আর এরকম যদি চলতে থাকে তাহলে খুব শীঘ্রই দুর্গাপুরের বুকে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কি হাসপাতাল, কি স্কুল-কলেজ, কি প্রশাসনিক ভবন সমস্ত জায়গায় দানবের মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাক্ষুসে বুলেট, কেটিএমের মতো দানবীয় বাইক। আর পুলিশ-প্রশাসন ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে হেলমেট আর কাগজ পরীক্ষার নামে ফাইন তোলায়। একবারও কী মনে হয় না যে এরা কারা? রাতের অন্ধকারে কোথা থেকে এসেই বা জড়ো হয় এই বাইক বাহিনী? কিছু কিছু যুবককে দেখেও তো মনে হয় না যে দুবেলা ঠিক মতো খাবারও তাদের জোটে কিনা, তাহলে ২-৩ লক্ষ টাকা দামের এই গাড়ি তাদের কাছে কোথা থেকে আসছে? সম্ভ্রান্ত পরিবারের যুবকদের কথা না হয় খরচের খাতাতেই থাকল। খবর পরিবেশনের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের আরও কিছু সামাজিক দায়িত্বও রয়েছে। সেই দায়িত্বের তাগিদেই দুর্গাপুরবাসীর কথা ভেবে চ্যানেল এই বাংলার এই বিশেষ প্রতিবেদন। নিজের সুরক্ষা তথা পরিবারের সুরক্ষার জন্য প্রতিবাদ করুন, আওয়াজ তুলুন।