নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- চার বছরের ফুটফুটে রিক বাগদীর জীবনটা যেন চলে গেল অবহেলায়। রেফার, আউটডোর, ফের অসুস্থতা শেষ পর্যন্ত মৃত্যু। এক রাতের মধ্যে ঘটে গেল সবকিছু। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে।
দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের রামানুজন এলাকার বাসিন্দা লক্ষণ বাগদীর চার বছরের সন্তান রিকের জ্বর হওয়ায় তাকে বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে নগর নিগমের উইলিয়াম কেরির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরিবারের দাবি, মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছনোর পর শিশুটিকে ভর্তি না করে আউটডোর বিভাগে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার ভোরে শিশুর পেটে ব্যথা শুরু হলে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে শিশুর মৃত্যুর পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা। মহকুমা হাসপাতালের সামনে মৃতদেহ রেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সকলে। মৃত শিশুর বাবা লক্ষণ বাগদীর দাবি ,সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হলে মৃত্যুর মুখে পড়তে হতো না তার ছোট্ট রিককে।
যদিও মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি, রোগী ভর্তি সংক্রান্ত কাগজপত্রে কিছু সমস্যার কারণে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে সময় লাগে। তবে, চিকিৎসা না দেওয়া বা অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কৃষ্ণেন্দু রায় জানান,”ঘটনাটা ঠিক কি ঘটেছিল সেটা আমি জানি না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভর্তির জন্য আমাদের তরফ থেকে জানানো হয়। কিন্তু তাও ভর্তি না করেই অনেকে চলে যায়। তবে সব মৃত্যুই বেদনা দায়ক। এই বিষয়টা কি হয়েছিল খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, সঠিক সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো না থাকার কারণেই অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল একটি শিশু। আবার শাসক দল তৃণমূলের দাবি ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত হবে এবং যদি কোনও ত্রুটি প্রমাণিত হয়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু এত কিছু বাকবিতণ্ডা মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন। সম্প্রতি দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের নানা পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা জানা গেছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বসেছে নানা উন্নত যন্ত্র, করা হয়েছে পরিকাঠামোগত উন্নয়নও, বেড়েছে রোগী শয্য়া। কিন্তু প্রয়োজনে সঠিক পরিষেবা কি মিলছে? ছোট্ট রিকের মৃত্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্ন নতুন করে সকলের সামনে তুলে ধরেছে।





