নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- গত কয়েকদিন ধরেই বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করাকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । বর্তমান সময়ে ডিজিটাল সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার ও তার ব্যাপ্তি নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আকর্ষণ ও আকুলতা লক্ষ্য করা যায় তা নিঃসন্দেহে অভাবনীয়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই ডিজিটাল সামাজিক মাধ্যম মানুষের কাছে দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি থেকে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের সকল খবরা খবর ও তথ্য জানার এক অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা চোখের পলক পড়ার আগেই ইন্টারনেট নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হচ্ছে মোবাইল বা ল্যাপটপ সহ বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে। এক কথায় বলতে গেলে সারা পৃথিবীতে এখন ডিজিটাল যুগের এক নবজাগরণ চলছে। আর এই নবজাগরণে জোয়ারে সারা পৃথিবীর মানুষও গা ভাসিয়ে দিয়েছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের ঘটনার পর এখন সবাইকে চিন্তা করতে বাধ্য করছে মানুষ কতটা ডিজিটাল মাধ্যমের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের দেশেও এখন ডিজিটাল ক্রান্তি চলছে। কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রকল্পের ডিজিটাল মাধ্যম সহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক চ্যানেলের ডিজিটাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ও ডিজিটাল নিউজ পোর্টাল এখন মানুষের প্রথম পছন্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখনো পর্যন্ত ডিজিটাল মাধ্যমের সংবাদ সম্প্রচারকে মান্যতা দেয়নি তেমনভাবে। তাই দেশে কর্মরত সকল ডিজিটাল মিডিয়া প্লাটফর্মের কর্মীরা একত্রিত হয়ে কেন্দ্রীয় ও নিজ নিজ রাজ্য সরকারের কাছে বিভিন্ন সময় আবেদন ও নিবেদন করছেন যাতে সরকার একটি নির্দিষ্ট নীতির নির্ধারণ করেন এবং ভারতবর্ষের ডিজিটাল নিউজ পোর্টাল ও মিডিয়ার ক্ষেত্রকে সরকারি মান্যতা দেয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের ডিজিটাল মিডিয়া প্লাটফর্মের একাধিক কর্মীকে একত্রিত করে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ‘বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশন’ নামক এক সংস্থার জন্ম হয়। বিগত কয়েক বছরে যার সদস্য সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত সকল ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কর্মীদের একত্রিত করে তাদেরকে সরকারি নিজস্ব পরিচয় পত্র ও কেন্দ্রীয় তথা রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন করতে দেখা গিয়েছে এই সংগঠনকে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত্রে কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ শিক্ষাঙ্গন দুর্গাপুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গেস্ট হাউসে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় সরকারের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ওয়ার্ড কমিউনিকেশন এবং ইনফরমেশন টেকনোলজির মাননীয় সদস্য সুকান্ত মজুমদারের সাথে এক সাক্ষাতে মিলিত হন ‘বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি মনোজ সিংহ সহ ২ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল।
বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি মনোজ সিংহ এ বিষয়ে বলেন, “‘বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশন’ পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কর্মরত সকল ভাই-বোনদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন। ডিজিটাল মিডিয়া কর্মীদের মান্যতা আদায়ের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছিল। মূলত তার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সূচিতে ডিজিটাল মিডিয়া শব্দটি সংযোজন হয়। যার সুফল হিসেবে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কর্মরত সকল সাংবাদিক বন্ধুদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারি নিজস্ব পরিচয় পত্র প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ইলেকশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া সম্প্রতি ঘটে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কর্মরত সাংবাদিক বন্ধুদের কোনরকম মান্যতা না দিয়ে সরকারি পরিচয় পত্র দিতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে একাধিকবার দরবার করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। কিন্তু তেমনভাবে কোন উল্লেখযোগ্য ফলাফল এখনো আসেনি। তাই আজ আমরা আমাদের রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তথা কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সরকারের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ওয়ার্ড কমিউনিকেশন এবং ইনফরমেশন টেকনোলজির মাননীয় সদস্য সুকান্ত মজুমদারের কাছে আমাদের আবেদন জানাতে এসেছিলাম। মাননীয় মন্ত্রী অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে আমাদের দাবি শুনছেন এবং আগামী দিনে কেন্দ্রীয় সরকারের যে দপ্তর গুলির সাথে যোগাযোগ করতে হবে তার বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন। শুধু তাই নয় তিনি নিজেও এ বিষয়ে সচেষ্ট হবেন বলে এদিন আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। স্বভাবতই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের এই সংবেদনশীল আচরণের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আগামী দিনে আমরা মাননীয় মন্ত্রীর দেখানো পথেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আর্জি জানাবো আমাদের মান্যতা/স্বীকৃতি প্রদান করার লক্ষ্যে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস,পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতো কেন্দ্রীয় সরকারও সকল ডিজিটাল মিডিয়ার সংবাদ কর্মীদেরকে মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেবেন খুব সত্বর।”



