সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- আমাদের সামনে থাকা মানুষটা যখন আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তখন আমাদের মনে অনেক কষ্ট জমা হয়। বছরকার দিনে আমরা যখন একটু হাসি মুখে কাটাতে চাই তখনও দেখি কেউ না কেউ কোনো না কোনো ভাবে আমাদের মন খারাপ করে দিচ্ছে! কিন্তু সামনের মানুষ এভাবে কি আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন? আপনি যদি বুঝতে পারেন কেউ কেন আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে তাহলে হয়তো আপনি আর উত্তেজিত হবেন না বা মন খারাপ করে বসে থাকবেন না। তাই নিজের আবেগকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে আগে জানতে হবে কেন কেউ আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে? এর উত্তর রয়েছে আমাদের সনাতন ধর্মেই।
স্বামী সোমেশ্বরানন্দ একবার এই বিষয়ে খুব সুন্দর কিছু কথা বলেছেন। তার কথায়,“ কেউ আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন? এর অর্থ তিনি কোনো কারণে disturbed আছেন, উদ্বিগ্ন রয়েছেন, নিরাপত্তার অভাব আছে তার মধ্যে। ফলে তার মন অশান্ত। Only disturbed people disturb others.” এছাড়া তিনি আরো বলেছেন যে, আরো কতগুলো কারণে সামনের মানুষটা আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারে, সেই কারণগুলো হলো-“আপনাকে অপমান করার চেষ্টা করছেন কেউ? অর্থাৎ তার অহং (ego) আহত হয়েছে। তিনি পাল্টা মার দিয়ে নিজের অহংকে তৃপ্ত করতে চাইছেন। কেউ অনর্থক তর্ক করছেন আপনার সাথে? কারণ তিনি নিজের মতামতকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন প্রাণপণে। তার ভয় যে আপনি তার কথাকে কেটে দিতে পারেন।”
মহারাজের কথায়,“আপনাকে বোকা বানিয়ে সুবিধা নিতে চাইছেন কোনো ব্যক্তি? কারণ তিনি মূলত লোভী। নিজের কর্মদক্ষতার উপরে বিশ্বাস নেই বলে ঘুরপথে কাজ হাসিলের চেষ্টা করছেন। কোনো ব্যক্তি আপনাকে ছোট দেখানোর চেষ্টা করছেন? অকারণে আপনার বিরুদ্ধে কাজ করছেন? এর অর্থ, তিনি ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে আপনি তাকে হারিয়ে উপরে উঠে যাবেন। এজন্য আগে থেকেই অন্যদের চোখে আপনাকে নীচ দেখাতে চাইছেন। আপনার কাছে সাহায্য পেয়েও তিনি আপনার প্রতি শত্রুতা দেখাচ্ছেন? কারণ সাহায্য নেওয়ার ফলে তার মনে হীনভাব জেগেছে। একে তিনি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন কৃত্রিমভাবে। হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে তিনি আপনাকে উল্টোপাল্টা সমালোচনা করছেন? অর্থাৎ, কোনো কারণে তার মনে রাগ চাপা ছিল। একটা অজুহাতে সেই রাগ বেরিয়ে আসছে। মনের ভারসাম্য নেই। কেউ আপনার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছেন, পেছন থেকে আপনার আড়ালে মিথ্যা নিন্দা করছেন? এর অর্থ, আপনার প্রতি তিনি ঈর্ষান্বিত। কিন্তু সামনে বলার সাহস নেই বলে, সরাসরি আপনাকে আঘাত করতে পারছেন না বলে লুকিয়ে তা করতে চাইছেন নিজেকে বাঁচিয়ে। এভাবে যখনই বুঝতে পারবেন কাউকে, অনুভব করার চেষ্টা করবেন, আপনার মনে পরিবর্তন আসবে। তার প্রতি রাগ বা বিদ্বেষ কম হয়ে মন ভরে উঠবে করুণায়। তার জন্য দুঃখ হবে। নিজের মন খারাপ দূর হয়ে যাবে। মন শান্ত হবে।”





