নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ- আরজি করের পর আবার ডাক্তারি ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা। এবার ঘটনাস্থল শিল্পশহর দুর্গাপুর। দুর্গাপুরের শোভাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দ্বিতীয় বর্ষের এক ডাক্তারি ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে শহরে তোলাপাড়। প্রতিবাদে সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। দোষীদের গ্রেফতারের দাবি হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছে কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়ারা।
জানা গেছে শুক্রবার রাত প্রায় ন’টা নাগাদ ওই ছাত্রী তাঁর সহপাঠী এক ছাত্রের সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে খাবার খেতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে পাঁচ যুবক এসে তাঁদের আটক করে এবং ছাত্রীকে জোর করে রাস্তা থেকে তুলে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায় ও ধর্ষণ করে। পরে ওই সহপাঠী ছাত্রই নির্যাতিতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে ওই মেডিক্যাল কলেজেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন নিযাতিতা তরুণী। যদিও ওই ছাত্রের দাবির সত্যাসত্য খতিয়ে দেখতে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
জানা গেছে ওই তরুণী ওড়িশার জলেশ্বরের বাসিন্দা। খবর পেয়ে শনিবার সকালেই দুর্গাপুরে পৌঁছেছেন নির্যাতিতার বাবা মা। নির্যাতিতার বাবা সহপাঠী ছাত্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যেই নিউটাউনশিপ থানায় ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি। পাশাপাশি কলেজের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্যাতিতার বাবা-মা। নির্যাতিতার বাবার দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে হস্টেলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁর। অন্যদিকে পুলিশ গতকাল রাতেই ওই ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিলেও পরে তাকে আটক করে।
এদিকে ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে অবস্থান বিক্ষেভে বসে মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়ারা। পাশাপাশি প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম সহ একাধিক রাজনৈতিক দল।
বিষয়টি নিয়ে শহরে তোলপাড়ের পাশাপাশি সমস্ত রাজনৈতিক দল ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তবে বিরোধী দলগুলি এই ঘটনার জন্য প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছে। দুর্গাপুরের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই এই ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী কের তার পদত্য়াগ দাবি করে বলেন, “যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। । রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, অথচ রাজ্যে প্রতিদিন মহিলাদের ধর্ষণ হচ্ছে। এই সরকার এই প্রশাসন নির্বিকার। শাস্তি হয়না বলেই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। বার বার ছোট ঘটনা তুচ্ছ ঘটনা তকমা দিয়ে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে পরিবারের। বাংলার মানুষ সে আরজি কর হোক মালদা হোক বিচার পায়নি। আর বিচার না পাওয়ার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে বাংলাকে কলঙ্কিত করেছেন। এই ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়বো। আর এর দায় মুখ্যমন্ত্রীর। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে লজ্জা থাকলে তিনি পদত্যাগ করুন। “
অন্যদিকে সিপিএম নেতা সৌরভ দত্তও এই ঘটনার জন্য রাজ্য প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তাকে দায়ী করে বলেন,” দুর্গাপুরের মতো জায়গায় এই ধরণের ঘটনা চিন্তা করা যায় না। দুষ্কৃতীরা যদি প্রশাসনকে ভয় পেত তাহলে এই ঘটনা ঘটতো না। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এবং দেশের একাধিক মেডিক্যাল কলেজে এই ঘটনার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হচ্ছে। আরজি করের পর এটা একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং বিষয়টি নিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক আলোচনা করতে চাইছেন না। কোন গাফিলতির কথা আন্দাজ করেই হয়তো তারা এটা করছেন। রাতে পড়ুায়া কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে অথচ কোন নজরদারি নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত পড়ুয়াদের যাতায়াতের বিষয়টির উপর নজর রাখা। কারণ পড়ুায়েদর কাছে এখানে কলেজই গার্জেন।”
যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যে কোন রকম সাহায্য়ের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে পুলিশ যেহেতু পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বারণ করেছে তাই আপাতত দেখা করিনি, তদন্তের স্বার্থে। আমরা চাই দোষীরা যতো দ্রুত সম্ভব ধরা পড়ুক। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি। ঘটনাটি খুবই মর্মাহত করেছে।”
অন্যদিকে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, “তদন্ত চলছে। পুলিশের কাছে নতুন তথ্য এলে তা জানানো হবে।”
অছাড়া এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে স্বাস্থ্যভবন।





