eaibanglai
Homeএই বাংলায়বাঁকুড়া শহরের বিপ্লবী কালীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস

বাঁকুড়া শহরের বিপ্লবী কালীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস

সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার ভূমিকা সর্বজনবিদিত। সেই আন্দোলনের অন্যতম সাক্ষী বাঁকুড়া শহরের কালীতলা। আর এই কালীবাড়ির পুজোর সঙ্গে মিশে আছে অগ্নিযুগের বীরসন্তানদের যজ্ঞশক্তির কাহিনী।

বাঁকুড়া জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত কালী মন্দির গুলির মধ্যে অন্যতম বাঁকুড়া শহরের বড় কালীতলার মন্দির । বাঁকুড়া শহরের এই মা কালী ‘বড় কালী’ হিসেবেই পরিচিত। তবে এই মন্দিরে বিপ্লবীদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল বলে অনেকে ‘বিপ্লবী কালী’ও বলেন। স্বাধীনত্তোর সময়ে এই মন্দিরের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের সন্ধান মেলে। এখানে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গীতাপাঠ,শক্তি সাধনা আর বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষা নেওয়ার কাজ হত। আলিপুর বোমা মামলায় দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্ত অধিকাংশ বিপ্লবীই কালীতলার কালীমন্দিরে কালী মূর্তির সামনে গীতা পড়তেন,বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষা নিতেন ও শক্তি সঞ্চয়ের জন্য শক্তি সাধনা করতেন।

প্রসঙ্গত এই বড় কালীতলা মন্দিরের কয়েকশো মিটারের মধ্যেই রয়েছে প্রাচীন এক বাড়ি যা বিপ্লবী বাড়ি নামে পরিচিত। বাঁকুড়ার আঞ্চলিক ইতিহাসের পাতা ঘাটলেই এই সম্পর্কে জানা যায়। ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে এই বাড়িতেই আস্তানা ছিল নামজাদা সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। অগ্নিযুগের ইতিহাস অনুসারে, বিশ শতকের গোড়ার দিকে স্থানীয় বাসিন্দা রামদাস চক্রবর্তীর বাড়িতে গড়ে উঠেছিল বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা। সেখানে আনাগোনা ছিল বীরেন ঘোষ, প্রফুল্ল চাকিদের মতো বিপ্লবীদের। আগত বিপ্লবীরা শক্তির আরাধনা করতেন এই কালী মন্দিরে। শুধু পুজো উপলক্ষে নয়, প্রতিদিন সকাল-বিকেল এই মন্দির চত্বরে নিয়ম করে চলত বিপ্লবীদের শরীরচর্চা। কুস্তি, মুগুর ঘোরানোর মত তৎকালীন জনপ্রিয় ব্যয়াম এবং যোগাসন চলত। এবং এই কালীমন্দিরে এসবের আড়ালেই চলত বিপ্লবীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ।

প্রায় প্রায় কয়েকশো বছরের প্রচীন এই পুজো আজও হয়ে চলেছে। নিত্য় পুজো হলেও কালীপুজোর দিন মন্দির সংলগ্ন মাঠে ঝোলানো হয় শামিয়ানা। রাতভর ভক্তিভরে হয় কালীর আরাধনা। এই মন্দিরে বংশানুক্রমে পুজো করে আসছেন শহরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা।

লোক মুখে প্রচলিত রঘু ডাকাতের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই কালিপুজো। জনৈক রঘু ডাকাত তৎকালীন জঙ্গলঘেরা এই এলাকায় শাক্ত দেবীর উপাসনা শুরু করেছিলেন। তখন এই এলাকা ছিল প্রায় জনশূন্য। পরে ওই এলাকায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বসতি। এই মন্দির লাগোয়া এলাকাতেই রামদাস চক্রবর্তী তৈরি করেন বাড়ি। যা পরবর্তীতে বিপ্লবী বাড়ি হয়ে ওঠে। এভাবেই বাঁকুড়ার এই কালীতলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের বীরগাঁথা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments