সন্তোষ কুমার মণ্ডল, আসানসোলঃ- কয়েকশো কোটি টাকা আর্থিক প্রতারণার ঘটনায় বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ আসানসোলের বার্নপুরে। কেলেঙ্কারিতে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার ও প্রতারিতদের অবিলম্বে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে প্রতিবাদে সরব হয়ে বিজেপি নেতা কর্মীরা বার্নপুরেট চিত্রা মোড এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।
প্রসঙ্গত তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সংখ্যালঘু বা মাইনরিটি সেলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি শাকিল আহমেদের ছেলে তহসিন আহমেদের বিরুদ্ধে চিটফান্ডের নাম করে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকারও বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সর্বস্বান্ত হয়েছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। আসানসোল উত্তর থানায় শাকিল আহমেদ, তহসিন আহমেদ সহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও ঘটনার তিনদিন পরেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত তিনজনই ফেরার রয়েছেন।
এদিন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “এটা নতুন কিছু নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে বাংলায় বেশ কয়েকটি চিটফান্ড মামলা সামনে এসেছে। যেমন সারদা ও রোজভ্যালি। এরপরে আসানসোলে এতো বড়ো একটা আর্থিক প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে এলো। যার মধ্যে সাধারণ মানুষের টাকা জড়িত। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রাজ্যের সবস্তরের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও মন্ত্রীরা নিজেদেরকে মুসলিমদের শুভাকাঙ্ক্ষী বলে দাবি করেন। কিন্তু আসানসোলে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে তাতে তো মুসলিম পরিবারগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩ হাজারেরও বেশি পরিবার প্রতারিত হয়েছে। যখনই এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ পায়, তৃণমূল কংগ্রেস অভিযুক্ত সম্পর্কে বলে যে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার যথেষ্ট নয়। যাদের টাকা নেওয়া হয়েছে তারা দরিদ্র মানুষ। তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। বিজেপি বিধায়ক বলেন, এদিন রাস্তা অবরোধ করে শুধুমাত্র ট্রেলার দেখালাম। আগামী দিনে আরো বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।”
একদিকে যখন এই আর্থিক কেলেঙ্কারি ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে বিরোধীরা তখন এই প্রসঙ্গে আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক বলেন, “তহসিন আহমেদের এই ট্রেডিং ব্যবসার জন্য কোন ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে বর্তমানে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। বর্তমানে আসানসোল পুরনিগমে ছুটি চলছে। ছুটির পরে এই সম্পর্কে খোঁজ করে দেখা হবে। তাতে যদি প্রমাণিত হয় যে তিনি অবৈধভাবে ব্যবসা করেছেন, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে, দলমত নির্বিশেষে অন্যায় সহ্য করা হয় না। রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের তরফে দলের মাইনরিটি সেলের জেলা সভাপতি তো সবকিছু বলেছেন। দল ও সরকার সর্বস্বান্ত হওয়া পরিবারের পাশে সবসময় রয়েছে।”
প্রসঙ্গতঃ, আসানসোলের রেলপারের বাসিন্দা তহসিন আহমেদের, তহসিন আহমেদ ট্রেডিং কোম্পানির বিরুদ্ধে৩৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ চড়া সুদে রিটার্ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতারিতদের দাবি প্রতিশ্রুতি মতো তহসিন প্রথম কয়েক মাস টাকাও দিয়েছিল কিন্তু তার পর হঠাৎ টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন তিনি। এদিকে গ্রাহকেরা টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিতে শুরু করলে অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ টাকা দেওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু তারপরও টাকা না মেলায় অবশেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন প্রতারিতরা।
পুলিশ জানিয়েছে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। যদিও ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।



















