নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ- অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত কর্মীদের কোয়ার্টার খালির নোটিশ ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অভিযোগ অনৈতিকভাবে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে ইস্পাত কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে রাষ্ট্রায়ত্ত নগর প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধ করে প্রতিবাদে সামিল হলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ও পরিবারের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত ২০২৩ সাল থেকে লাগাতার ‘ইস্পাত কোয়ার্টার লাইসেন্সিং স্কিম প্রস্তাব ২০২২’ এর প্রতিবাদ করে আসছে অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত কর্মীদের নাগরিক ফোরাম। ওই স্কিম অনুযায়ী মিনিমাম সিকিউরিটি ডিপোজিট সহ একাধিক শর্ত মানতে রাজি হননি অধিকাংশ অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। ফলে ২৩-২৪ সালে কোয়ার্টার রিনিউলায়ের আবেদন জানাননি তারা। তার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি নোটিশ জারি করে জানানো হয়েছে ৩১ তারিখের মধ্যে রিনিউয়ালের আবেদন করা না হলে কোয়ার্টারের জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন করা হবে।
এদিন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক স্বপন সরকার বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত ডিএসপি ( দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা) ও এএসপি ( মিশ্র ইস্পাত কারখানা ) কৃর্তৃপক্ষ কর্মী আবাসন নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০২৩ সাল থেকে আমরা তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। আমরা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মানতে পারছি না। আমরা গত ১৫ অক্টোবর ডেমোস্ট্রেশন দিয়ে ইস্পাত কর্তৃপক্ষকে পরিস্কার করে কয়েকটা বিষয় জানিয়েছি। যেমন-১) সিকিউরিটি মানি বৃদ্ধি করা যাবে না। কারণ,১৯৯৯ সালে যাঁরা অবসর নিয়েছেন তাঁরা ৩ থেকে ৪ লাক্ষ টাকা পেয়েছে আর এখন যে অবসর গ্রহণ করছেন সে দেড় কোটি টাকা পাচ্ছেন। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে বড় ফারাক রয়েছে। ২) কোম্পানিকে আমরা রেভিনিউ দিতে চাই, বিনা পয়সায় থাকতে চাই না। ৩) যে বাড়ি ভাড়া ১০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা করা হয়েছে, এটা বাড়ানো যাবে না। ৪) ক্যাটাগরি ৩ এবং ৪-এর কিছু সমস্যা আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সুষ্ট মীমাংসায় পৌঁছতে হবে। ৫) জল, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, সহ টাউনশিপে বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ দিতে হবে।” এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “আজকে মানব বন্ধন করে কর্তৃপক্ষকে বার্তা দেওয়া হল যে, আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সুষ্ঠু মীমাংসা করুণ।”
এএসপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুভাষ ঘোষ বলেন, “১৫ বছর পরে হঠাৎ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে যে বিশাল পরিমাণ অঙ্কের সিকিউরিটি ডিপোজিট মানি নির্ধারণ করা হয়েছে তা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা যখন অবসর গ্রহণ করি তখন আবাসনগুলির বয়স প্রায় ৪০-৪৫, সেগুলি ভেঙে পড়েছিল, বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী আবাসন রক্ষনাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষ কোন খরচ করবে না বলে জানিয়েছিল। সেই অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরাই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আবাসনগুলি বসবাস যোগ্য করে তোলে। এখন যখন শ্রমিক কর্মচারীরা আবাসন বসবাস যোগ্য করে তুলেছে তখন হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কারখানাকে দাঁড় করানো শ্রমিকদের উচ্ছেদ করতে চাইছে। এই অনৈতিক প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের মানব বন্ধন।”
অন্যদিকে এই উচ্ছেদ নোটিশ ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত কর্মীদের পাশে থেকে আন্দোলন গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। অন্যদিকে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ইস্পাত কলোনির আবাসন অবৈধভাবে দখলদারির অভিযোগ এনেছে।
দুর্গাপুরের ১নং ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রাজীব ঘোষ এই উচ্ছেদ নোটিশের বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেন, ” কয়েক হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী কারখানার আবাসনে বসবাস করছেন। শুধু তাই নয়। এনারা নিজেদের ঘামরক্ত দিয়ে ডিএসপি এএসপি কে আজকের জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু স্টিল কর্তৃপক্ষ তালিবানি প্রথায় নোটিশ জারি করে জানিয়েছে ৩১ তারিখের মধ্যে রিনিউয়াল না করলে জল বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন করে দেওয়া হবে। এমনকি উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের এই ইস্পাত মন্ত্রক তাদের যে এই অমানবিক কর্মকাণ্ড, তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যদি উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয় আমরা রাজনৈতিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেস এইসব অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পাশে থাকব এবং তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো। আমরা চ্যালেঞ্জ করছি, কীভাবে ওনারা উচ্ছেদ করতে পারেন, আমরাও দেখে নেব। “
পাল্টা জেলা বিজেপির নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ” সেইল অথোরিটি অফ ইন্ডিয়া থেকে নোটিশ জারি করে বলা হয়েছিল- গত কয়েক ধাপে (২০০২,২০০৮, ২০১৫) লিজে যে কোয়ার্টার দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি রিনিউয়াল করার জন্য একটা কনসিডারেবল রেটে। কিন্তু সেটা অনেকেই করেনি। স্টিল টাউনশিপে প্রায় ১৮হাজার কোয়ার্টার আছে। তাতে ৫হাজারের মতো ওয়ার্কিং এমপ্লয়িজ আছে। ৯ হাজারের মতো এক্স এমপ্লয়িজ আছে। বাকি চার হাজার কোয়ার্টার তৃণমূলের দখলে। তারা নানারকম দোকান করে কোয়ার্টার দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছে। এদের আগে ভাগানো হোক। আর যারা অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তাদের একটা কনসিডারেবল রেটে কোয়ার্টারগুলো লিজে দেওয়া হোক। আর রিনিউয়ালের জন্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের অন্তত অ্য়াপিল করা উচিৎ। নতুন রেটে তাদের সায় না থাকতে পারে। কর্তৃপক্ষককে কনসিডার করার সুযোগ দিক। ফর্ম ফিলাপ করে অন্তত জমা তো করুক। এটা করার খুব দরকার। তৃণমূলের পাল্লায় পড়ে ২০২৩-২৪-এ অনেকে রিনিউয়ালের ফর্ম ফিলাপ করেনি তাই ইভিকশন নোটিশ দেওয়া হয়েছে। “


















