সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের অনুসারে দেশের ১১টি রাজ্যের পাশাপাশি এ রাজ্যেও শুরু হয়েছে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের কাজ। ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে নির্বাচন কমিশন নিয়োজিত বুথ লেভেল অফিসারদের হাত দিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যেতে শুরু করেছে এনুমারেশন ফর্ম। এবার তা পৌঁছে গেল বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের প্রত্যন্ত আদিবাসী শবর সম্প্রদায় অধ্যুষিত গ্রামে। আর ফর্ম হাতে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।
বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে রানিবাঁধ ব্লকে ঘন জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কয়েকটি গ্রাম ঘাগরা, মৌলা, বড়ডাঙ্গায় বাস আদিবাসী শবর সম্প্রদায়ের মানুষের। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০টি শবর পরিবারের বসবাস। যেখানে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও উন্নয়নের আলো পৌঁছয়নি। গ্রামগুলিতে নেই আবাস প্রকল্পের কোন ঘর। নেই পাকা রাস্তা। রীতিমতো দুর্গম পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হয় গ্রামগুলিতে। অভাব রয়েছে পানীয় জলের।
সেই গ্রামগুলিতে বাড়ি বাড়ি হঠাৎ পৌঁছে গেছে এসআইআর-এর এনুমারেশন ফর্ম। ব্লক প্রশাসনের নির্দেশে বিএলওরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের হাতে এনুমারেশন ফর্ম তুলে দিয়েছেন। কিন্তু সেই ফর্ম কীভাবে পূরণ করবেন, কোথায় জমা দিতে হবে, কোন নথি লাগবে, সেসব কিছুই জানেন না লেখাপড়া না জানা গ্রামের মানুষ। গ্রামবাসীরা বুঝতেই পারছেন না, এই ফর্মে কী লিখবেন, ভুল হলেই বা কী হারাবেন।ফলে বিভ্রান্তি আর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁদের। বলতে গেলে ওই ফর্মের কাগজটিই এখন শবর সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের অন্যতম পিছিয়ে পড়া জনজাতি শবর সম্প্রদায়। একসময় সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও সরকারি উদ্যোগে তাঁদের মূল ধারায় ফেরানোর চেষ্টা হয়। যদিও ঘাগরার মতো গ্রামগুলিতে সেই প্রচেষ্টা এখনো অধরা।
এই শবর সম্প্রদায়ের ভোটারদের নিয়ে কি ভাবছেন রাজনৈতিক দলগুলি? শাসক বিরোধী দুই পক্ষই অবশ্য দাবি করেছে চিন্তার কারণ নেই, এলাকার মানুষের সাহায্য়ের জন্য শিবির করা হচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিনিধিরাও বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।
এবিষয়ে তৃণমূলের রানিবাঁধ ব্লক সভাপতি উত্তম কুম্ভকার বলেন, “এলাকার কম শিক্ষার হার থাকায় বহু মানুষ এসআইআর ফর্ম পূরণে সমস্যায় পড়ছেন। তৃণমূলের পক্ষ থেকে সহায়তা শিবির চালু করা হয়েছে এবং কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে ফর্ম পূরণে সাহায্য করা হচ্ছে।”
অন্যদিকে, বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সম্পাদক দুঃখিরানী মুদি বলেন, “কম শিক্ষিত মানুষের জন্য বুথ লেভেল কর্মী ও বিএলএ-২–দের এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। আতঙ্কের কারণ নেই, ফর্ম ফিলাপসহ সব বিষয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।”
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের অভিযোগ ভোটার তালিকা থেকে বৈধ ভোটার বাদ দিয়ে ভোটের রাজনীতির খেলা খেলতেই কেন্দ্র এই কর্মসূচি চালু করেছে। অন্যদিকে বিজেপির দাবি অবৈধ ও ভুয়ো ভোটার বাদ দিতেই ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের প্রয়োজন। যদিও জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় বাস করা,সেভাবে সভ্যতার আলো না দেখা শবর সম্প্রদায়ের মানুষের এই সব রাজনৈতিক কড়চায় কিছু যায় আসে না। বরং তাঁদের কাছে অজানা ওই ফর্ম(কাগজ) যেন আতঙ্ক নিয়ে পৌঁছে গেছে।

















