জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান -: হতেই পারত এবং সেটাই হতো স্বাভাবিক ও মানানসই। থাকতে পারত রঙিন মায়াবী আলোর ঝলকানি ও মৃদু সঙ্গীতের মিষ্টি আওয়াজ এবং ঘর ভর্তি নিজের পেশার জগতের ব্যক্তিরা। অথচ পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের সুপরিচিত চিকিৎসক দম্পতি ডা.উদয়ন চৌধুরী ও ডা.কবিতা চৌধুরীর একমাত্র কন্যা ‘প্রাপ্তি’ অনুস্মিতার ১৪ তম জন্মদিন পালিত হলো চারদেওয়ালের বাইরে, সবার মাঝে। চিকিৎসক দম্পতির সৌজন্যে এলাকাবাসী একটু অন্যরকম পরিবেশের সাক্ষী থাকার সুযোগ পেল। যদিও জন্মদিন ছিল ১০ ই নভেম্বর, কিন্তু প্রাপ্তির পরীক্ষা থাকার জন্য জন্মদিন পালন করা হয় ১৬ ই নভেম্বর।
সন্তানের জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য জন্মদিনে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। দুর্গাপুর সাব ডিভিশনাল ব্লাড ডোনার ফোরামের সহযোগিতায় শিবির থেকে মোট ৩০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রক্তদান শিবিরকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়।
চিকিৎসক দম্পতি পরিচালিত ‘ছোঁয়া’র ১০০ জন দুস্থ বাচ্চাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় শীতের পোশাক। ‘ছোঁয়া’য় দুস্থ শিশুদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি তাদের প্রতিভা বিকাশের জন্য সমস্ত ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
অতীতের মত এবারও স্থানীয় দশ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে স্কলারশিপ বাবদ নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়। নগদ অর্থ পেয়ে শিক্ষার্থীরা খুব খুশি।
খেলাধুলায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য স্থানীয় ৫ টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে ফুটবল, ক্রিকেট ও ব্যাডমিণ্টন খেলার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
জন্মদিন পালন উপলক্ষ্যে আত্মরক্ষার জন্য শুরু হয় মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ কর্মশালা। জানা যাচ্ছে সপ্তাহে একদিন করে সম্পূর্ণ বিনা খরচে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সেবার জন্য ডাক্তার দম্পতি ‘উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত জাগো নারী’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা গড়ে তুলেছেন। লক্ষ্য হলো ধীরে ধীরে গোটা রাজ্য জুড়ে সেবার কাজ ছড়িয়ে দেওয়া।
চিকিৎসক দম্পতির একমাত্র কন্যা হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ পোশাকে সবার মাঝে উপস্থিত ছিল কিশোরী অনুস্মিতা। নিজের সরল ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে বাচ্চা মেয়েটা হয়ে উঠেছিল সবার প্রিয়। নিজের হাতে কেক কেটে সবার মুখে তুলে দেয়। তখন তার মুখে ছিল সরলতার হাসি।
ছোট্ট অনুস্মিতার বক্তব্য – আমার লক্ষ্য মা-বাবার দেখানো পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া এবং সবার পাশে দাঁড়ানো। এরজন্য সবার আগে নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। ছোট্ট মেয়েটার আন্তরিকতা পূর্ণ প্রতিটি শব্দ সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
উদয়ন বাবু বললেন- সবার মাঝে আমাদের সন্তানের জন্মদিন পালন করে একটা আলাদা তৃপ্তি পাই। দামি উপহারের পরিবর্তে সবার আশীর্বাদ আমাদের কাছে বেশি মূল্যবান।
অন্যদিকে কবিতা দেবী বললেন, আমরা চাই আমাদের সন্তানও যেন সবার পাশে দাঁড়ায়।



















