সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- আমরা সকলেই “সহজ পাঠ” বইয়ের সঙ্গে খুব পরিচিত। ছোটবেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে এই বই না পড়ে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই বই বাঙালির আবেগ, স্মৃতি আর শৈশবের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। কিন্তু সহজ পাঠ বইয়ে যে সব প্রাণবন্ত, সুন্দর, শিশু মনস্তত্ত্ব অনুযায়ী ছবি আঁকা রয়েছে— সেই ছবিগুলোর স্রষ্টা কে, তা আমরা অনেকেই জানি না। সেই অসাধারণ শিল্পী হলেন প্রবাদপ্রতিম নন্দলাল বসু।
৩রা ডিসেম্বর, তাঁর জন্মদিন। তাই এদিন বাঁকুড়ার সোনামুখী উত্তর চক্রের মদনপুর জয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশেষভাবে পালিত হলো তাঁর ১৪৩তম জন্মজয়ন্তী। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা শিল্পীর প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রা করে গ্রাম পরিক্রমা করেন। পরে বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে নন্দলাল বসুর প্রতিকৃতিতে পুষ্প ও মাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তাঁর অবদান, তাঁর শিল্পচর্চা এবং সহজ পাঠে তাঁর অমর সৃজনশৈলী সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের জানানো হয়।
১৮৮২ সালের ৩ ডিসেম্বর নন্দলাল বসুর জন্ম। তাঁর বাবা পূর্ণচন্দ্র বসু এবং মা ক্ষেত্রমণি দেবী। জন্মস্থান বর্তমান বিহারের হাভেলি খড়্গপুর। যদিও তাঁদের আদি বাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার জেজুর গ্রামে। ভারতীয় শিল্পকলার উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। ১৯৬৬ সালের ১৬ এপ্রিল তিনি পরলোকগমন করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনন্দময় ঘোষ জানান, “সহজ পাঠ বই আমাদের শিক্ষা জীবনের অমূল্য সম্পদ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম সবাই জানে, কিন্তু বইয়ের ভিতরের ছবিগুলোর এই মহান শিল্পীকে অনেকেই চেনে না। তাই তাঁর জন্মদিনে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁকে স্মরণ করছি এবং তাঁর অবদান তুলে ধরছি।”
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অতনু ঘোষ ও রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “ইন্টারনেটের যুগেও সহজ পাঠ বই আগের মতোই সমান জনপ্রিয়। আজ বাচ্চাদের নন্দলাল বসুর সম্পর্কে জানাতে পেরে আমরা খুব আনন্দিত।”
বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও শিল্পীর প্রতিকৃতি দেখে উৎসাহিত হয়েছে। তারা বলেছে— “আজ আমরা জেনেছি সহজ পাঠের ছবিগুলো কে এঁকেছেন। তাঁর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে খুব খুশি!”
যেমন রবীন্দ্রনাথের লেখা আমাদের হৃদয়ে থাকে, ঠিক তেমনই সহজ পাঠের প্রতিটি ছবির ভিতর বেঁচে থাকবেন শিল্পী নন্দলাল বসু। বাঙালির শৈশবের স্মৃতির সঙ্গে তিনি চিরজাগরুক থাকবেন।


















