eaibanglai
Homeএই বাংলায়পুত্র অভাবে হাহাকার আসলে কারা করে? কী বলছে শাস্ত্র?

পুত্র অভাবে হাহাকার আসলে কারা করে? কী বলছে শাস্ত্র?

সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- আমাদের আশেপাশে আমরা এমন অনেক মানুষকে দেখি যারা বংশ উদ্ধারের জন্য এবং একটি পুত্র সন্তানের জন্য একাধিক জন্ম দিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে এমন ভ্রান্ত ধারণা আছে যে কন্যা সন্তান হলে বংশের উদ্ধার হয় না। এর আগের দিন একটি প্রতিবেদনে আমি বলেছিলাম যদি কোন ব্যক্তি নিঃসন্তান‌ও হন তবু ও সনাতন ধর্ম অনুসারে কতগুলি নিয়ম মেনে চললে সে পরম গতি লাভ করেন। আজ বলবো যাদের পুত্র সন্তান নেই শুধু কন্যা সন্তান আছে তাদের কী গতি লাভ হয় সেই কথা…

গরুড় পুরাণে লেখা আছে যে একবার গরুড় ভগবানকে প্রশ্ন করেছিলেন,“হে প্রভু! আপনি বলেছেন—পুত্ নামক নরক থেকে যে ত্রাণ করে, সেই পুত্র। তাই পুত্রই পিণ্ডদান করে পিতাকে স্বর্গে পাঠায়। কিন্তু জগতে এমন অনেক ধার্মিক মানুষ আছেন, যাঁদের কোন‌ও পুত্র নেই, কেবল কন্যা সন্তান আছে। তবে কি সেই সব পিতা-মাতা মৃত্যুর পর নরকে যাবেন? তাঁদের কি মুক্তি নেই? তাঁদের শ্রাদ্ধ কে করবে?

ভগবান তখন মুচকি হেসে বলেন,“হে গরুড়! এই ভ্রান্ত ধারণা ত্যাগ করো। আমার সৃষ্টিতে পুত্র ও কন্যায় কোনো ভেদ নেই। যদি কোনো ব্যক্তির পুত্র না থাকে, তবে তাঁর কন্যা অথবা দৌহিত্র (কন্যার পুত্র বা নাতি) শ্রাদ্ধ করার সম্পূর্ণ অধিকারী। পুত্রহীন ব্যক্তির জন্য তাঁর দৌহিত্র (কন্যার ছেলে) পিণ্ডদান করলে তা পুত্রের পিণ্ডদানের মতোই ফলদায়ক হয়।”

এরপর ভগবান বিষয়টা বোঝানোর জন্য ধর্মদত্ত ও তার কন্যা সুমতির কথা বলেন। অনেক কাল আগে ধর্মদত্ত নামে একজন ধার্মিক ব্রাহ্মণ ছিলেন, যিনি সারাজীবন পূজা-অর্চনা করতেন, কিন্তু তাঁর মনে একটাই দুঃখ ছিল—তাঁর কোন‌ও পুত্র ছিল না, সুমতি নামে তার কেবল একটি কন্যা ছিল।

ধর্মদত্তের মৃত্যুর আগে একদিন তিনি কাঁদতে কাঁদতে তার স্ত্রীকে বলেন, “আমার দুর্ভাগ্য! আমার মৃত্যুর পর আমাকে কে জল দেবে? আমার বংশে বাতি দেওয়ার কেউ রইল না। আমি নিশ্চয়ই ‘পুৎ’ নরকে পচে মরব।”
বাবার এই কথা শুনে তার মেয়ে সুমতি একজন ঋষির কাছে গেলেন। ঋষি তখন বললেন, ‘মা, তুমি কেন কাঁদছ? শাস্ত্র বলে, ‘পুত্রিকা-পুত্র’ অর্থাৎ কন্যার সন্তান পুত্রের সমান। তুমি তোমার পিতাকে কথা দাও যে তোমার গর্ভে যে সন্তান হবে, সে-ই তাঁর পিণ্ডদান করবে।” এরপর সমাজের লোকের কথা অগ্রাহ্য করে সুমতি শাস্ত্রানুসারে তার পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করলেন আর পরবর্তীতে সুমতির পুত্র বড় হয়ে গয়াতে গিয়ে ভক্তিভরে তার দাদু ধর্মদত্তের নামে পিণ্ডদান করলেন এরপর সেই রাতেই ধর্মদত্ত দিব্য শরীর লাভ করে স্বপ্নে এসে কন্যাকে দেখা দিয়ে বললেন, “মা রে! তোর পুত্রের দেওয়া পিণ্ডে আমি তৃপ্ত হয়েছি। যমরাজ আমাকে সসম্মানে স্বর্গে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি আজ বুঝলাম, পুত্র আর কন্যায় কোন‌ও তফাৎ নেই। তুই-ই আমার প্রকৃত সন্তান।”

গড়ুড় পুরাণে বলা হয়েছে: পুত্রাভাবে চ পত্নী স্যাৎ, তদভাবে চ সোদরঃ অর্থাৎ পুত্র না থাকলে স্ত্রী শ্রাদ্ধ করতে পারেন, আর স্ত্রী অক্ষম হলে বা না থাকলে কন্যা শ্রাদ্ধের সম্পূর্ণ অধিকারিণী। এরপর ভগবান বললেন,“হে খগেশ্বর! যারা পুত্র নেই বলে হাহাকার করে, তারা আসলে মায়ার বশবর্তী। কন্যা যদি ভক্তিভরে পিতামাতার সেবা করে এবং মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ করে বা করায়, তবে সেই পিতামাতা অবশ্যই মোক্ষ লাভ করেন। ভক্তি ও শ্রদ্ধাই হলো আসল, লিঙ্গভেদ শরীরের—আত্মার নয়।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments