সংবাদদাতা,দুর্গাপুর ও আসানসোলেঃ- জমি কেনা বেচার নামে বহু কোটি টাকা আত্মসাৎ-এর পর এবার টাকা ডবল করার লোভ দেখেয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা “মানি লন্ডারিনের” (money laundering) প্রতারণার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরের ভুয়ো রিয়েল এস্টেট সংস্থার ‘৯৯ বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড’-এর বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই ওই বিল্ডার সংস্থার অন্যতম কর্ণধার শ্যাম পান্ডে ও রাম প্রতাপ সিংহের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে পুলিশী তদন্ত। দুর্গাপুরের ‘অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সাব রেজিস্ট্রার’ বা ‘এডিএসআর’ শান্তনু পালের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জীব দে-র নেতৃত্বে চলছে তদন্ত। এবার এই ঘটনায় স্পেশাল তদন্তকারী টিম বা সিট গঠন করতে চলেছে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট বলে জানা গেছে। পুলিশের তরফে চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযুক্তরা যাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই, আগাম জামিন না পায় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

একটি সুত্র মারফত জানা গেছে, দুর্গাপুর ও আসানসোলে ভুয়ো রিয়েল এস্টেট সংস্থা খুলে ফ্যাট বাড়ি নির্মাণ, বিক্রি ও জমি বিক্রির নামে কয়েকশো মানুষকে প্রতারিত করে বহু কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে সংস্থাটি। এমনকি ঝাড়খণ্ডেও এই ভুয়ো সংস্থার ফাঁদ পেতে বহু মানুষকে প্রতারিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এবার এই ভুয়ো সংস্থার বিরুদ্ধে টাকা ডবল করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা “মানি লন্ডারিনের” (money laundering) আত্মসাৎ ও প্রতারণা করে বহু মানুষকে পথে বসানোর অভিযোগ উঠেছে। এই মর্মে নাকি একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে প্রশাসনের কাছে এবং সেই খবর পৌঁছছে নবান্নের উপর মহলে পর্যন্ত। এরপরই নাকি এই মানি লন্ডারিংয়ের তদন্ত শুরু করেছে রাজ্যের ইকোনমিক অফেন্স উইং (Economic Offences Wing)। ঘটনার পর নানা রকম সূত্র মারফত জানা গেছে আসামীদের বিরুদ্ধে স্পেশাল তদন্ত টিম গঠিত করতে চলেছে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট (ADPC)।

স্থানীয় একটি সূত্র মারফত জানা গেছে, সরকারি খাস জমি দখল করে প্লটিং করে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তা বিক্রি করে ভুয়ো সংস্থাটি। এভাবে গত কয়েক বছরে নাকি প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রচুর কাস্টমার নাকি অভিযোগ করেছে- এক জায়গায় প্লট দেখিয়ে অন্য জায়গায় জমি দেওয়ার চেষ্টা করেছে সংস্থাটি, এবং জমি দিতে না পারে সঠিক সময়ে পয়সাও ফেরত দিতে পারেনি ‘৯৯ বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড’।
সুত্র মারফত জানা গেছে পুলিশের একটি টিম তদন্ত করার জন্য পৌছিয়ে গেছে দুর্গাপুর সাব রেজিস্ট্রেরের কাছে। কিভাবে জাল দলিল রেজিস্ট্রি হলো? কিভাবে সরকারি সীল, ছাপ মারা ওয়ারেশন সার্টিফিকেট জোগাড় হলো? কিভাবে ডাক্তারের সই করা ডেথ সার্টিফিকেট জোগাড় করল সংস্থাটি? পঞ্চায়েতের কেউ এই ঘটনায় যুক্ত কিনা? এইসব তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ‘৯৯ বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড’ এর মালিক শ্যাম পান্ডের গতিবিধির উপর নজর রাখছে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট (ADPC) বলে জানা গেছে।

এদিকে তদন্তকারী পুলিশের আধিকারিকরা বিভিন্ন জায়গার জমির দলিল খতিয়ে দেখে জানতে পেরেছেন যে, যে ব্যক্তির নামে দলিল হচ্ছে তাকে জানি-চিনি বা ‘আইডেন্টিফাইড’ করেছেন আদালতের এক উকিল বাবু । আবার নাকি তিনি সাক্ষী হিসেবেও নিজেই সই করেছেন সেই দলিলে। এখন শিল্পাঞ্চলের সর্বোত্ত একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহলে কি এই প্রতারণা চক্রের সাথে বেশ কিছু নামকরা সরকারি আধিকারিক সহ প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িয়ে রয়েছেন? পুলিশের একটি সূত্র মারফত জানা গেছে, তদন্তের জাল অতি দ্রুত গুটিয়ে আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আপাতত জামিনে মুক্ত আছেন, বাকি অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হবে এবং আইন মোতাবেক যথাযত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।



















