নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ- প্রথম পর্বের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে এসআইআর বা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনের দ্বিতীয় পর্যায়, শুনানিপর্ব। প্রতি দিন ‘নো ম্যাপিং’ ভোটারদের ডেকে তথ্য ও নথি সংগ্রহ করছে কমিশন। অন্যদিকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই শুনানি নিয়ে হেনস্থার অভিযোগ উঠছে। কোথাও ভিড়ের অভিযোগ তো কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার। আবার কোথায় বয়স্ক অসুস্থ মানুষকে বাড়ি থেকে শুনানিকেন্দ্রে উপস্থিত হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই পর্বে সবচেয়ে ঝক্কি সামলাতে হচ্ছে বয়স্কদের। সোমবার দুর্গাপুরে এমনই একটি ঘটনা সামনে এসেছে।
দুর্গাপুরের ইস্পাত নগরীর জয়দেব রোডের বাসিন্দা চলাফেরায় প্রায় অক্ষম ৭৫ বছরের বৃদ্ধাকে এদিন দেখা গেল ভাঙা শরীরে জামাইয়ের কাঁধে ভর দিয়ে হাজির হয়েছেন দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে আসআইআর শুনানি কেন্দ্রে। কন কনে শীতের সকালে ভোটার তালিকায় নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে রীতিমতো কষ্ট করে শুনানি কেন্দ্রে হাজির হন বৃদ্ধা।
বৃদ্ধার জামাই অরুণ চট্টরাজ জানান, তাঁর শাশুড়ি মা বহু বছর ধরে দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভার ১১৯ নম্বর বুথে ভোট দিয়ে আসছেন। অথচ হঠাৎ বলা হলো, ২০০২ সালের তালিকায় তাঁর নাম নেই। তাই শুনানিতে হাজির হতে হবে। এদিকে তিনি হাঁটতেই পারেন না। ফলে অনেক কষ্ট করে তাঁকে শুনানিকেন্দ্রে পৌঁছতে হয়েছে।
এই ভোগান্তির জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে অরুণবাবু বলেন, “এটি নির্বাচন কমিশনের চরম গাফিলতি ও অমানবিকতার নিদর্শন।” বাড়িতে গিয়ে যাচাই না করে, চলাফেরায় অক্ষম এক বৃদ্ধাকে কেন কষ্ট করে শুনানি কেন্দ্রে আসতে বাধ্য করা হলো তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
অন্যদিকে এসআইআর শুনানিতে বয়স্কদের হাজিরা ও হেনস্থার অভিযোগে এদিন সরব হন রাজ্যের মন্ত্রী তথা দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার। তিনি বলেন, “বিজেপির মনোনীত ইলেকশন কমিশন। এদিকে বিজেপির বড় বড় নেতারা বলছেন বয়স্ক অক্ষমরা যদি ভোট দিতে যেতে পারে শুনানিতে কেন যাবে না। শারীরিক অক্ষমতা যদি থাকে ভোট দিও না বাড়িতে বসে থেকো। ওরাই ঠিক করে দিতে চাইছে কে কে ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করবে। বিজেপির অঙ্গুলি হেলনে এই হেনস্থা ও অমানবিকতা হচ্ছে।”
যদিও বিজেপির তিন নম্বর মন্ডল সভাপতি বুদ্ধদেব মন্ডল বলেন,”নির্বাচন কমিশন পরিষ্কার জানিয়েছে যারা শারীরিকভাবে অক্ষম তাদের বাড়িতে গিয়ে শুনানি হবে। তারপরেও কেন ডাকা হল প্রৌঢ়াকে সেই নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাইব। এর পিছনে বিএলওর চক্রান্ত থাকতে পারে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিম বর্ধমান জেলার নয়টি বিধানসভা নির্বাচনী এলাকায় মোট ৪২টি কেন্দ্রে শুরু হয়েছে আআইআর-এর শুনানি। জেলার ১.৪০ লক্ষ জনকে এই শুনানিতে হাজিরারা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এই শুনানি প্রক্রিয়া চলবে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ।

















