বিশেষ প্রতিবেদনঃ ১৯৮২ থেকে ২০১৯। মাঝে প্রায় তিন দশকেরও বেশি ব্যবধান। দেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীর দুর্গাপুর সফরের পর দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এর মাঝে দুর্গাপুর শহরের বুকে পা পড়েনি কোনও প্রধানমন্ত্রীর। সেই তিন দশকেরও বেশি সময়ের খরা কাটিয়ে আবারও ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে প্রচারে দুর্গাপুরে আসছেন দেশের ১৪তম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৯৮২ সালে তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারে দুর্গাপুরের নেহেরু স্টেডিয়ামে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে নেমেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেদিন তাঁর পড়নে ছিল ঘিয়া রঙের মেরুনপাড় সিল্কের শাড়ি। নেহেরু স্টেডিয়াম থেকে কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দিয়ে দুর্গাপুরের গান্ধীমোড় সংলগ্ন গান্ধী ময়দানে প্রকাশ্য জনসভায় বক্তৃতা দেন তিনি। আগামী ২রা ফেব্রুয়ারি দুর্গাপুরে আবারও এক প্রকাশ্য জনসভায় ভারত জনতা পার্টির হয়ে নির্বাচনী প্রচারে আসছেন দেশের ১৪তম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কাকতালীয় হলেও সেদিনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান অবতরণ করবে দুর্গাপুরের সেই নেহেরু স্টেডিয়ামেই। ওই নেহেরু স্টেডিয়ামেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে দুর্গাপুরে ব্যস্ততা তুঙ্গে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় এসপিজি ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা আধিকারিকেরা সভাস্থল পরিদর্শন করছেন। আকাশপথেও একনাগাড়ে নজরদারি শুরু হয়ে গেছে।
সম্পূর্ণ বিপরীত দুই দলের হলেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একাধিক মিল পাওয়া যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কি সেই মিল? একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেই মিলগুলি।
১। ১৯৮২ সালে তৎকালীন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রস্থল হিসেবে দুর্গাপুর শহরকে বেছে নিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তাঁরপরেও বহু তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্ব দেশের প্রধানমন্ত্রী পদ অলঙ্কৃত করলেও দুর্গাপুর সফরে আসেননি কোনও প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ ৩৬ বছরের সেই চিরাচরিত প্রথাকে ভেঙে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে দুর্গাপুরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
২। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে শুধু ভারতবর্ষ নয়, ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গোটা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। ঠিক সেইভাবেই একজন সাধারন ব্যক্তি থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে নিজের প্রভাব জাহির করেছেন নরেন্দ্র মোদীও। গোটা বিশ্বে ভারতবর্ষকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার যে মরিয়া চেষ্টা দেখা গিয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে ঠিক তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সময়েও। তিনিও ভারতবর্ষকে এক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গোটা পৃথিবীর কাছে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।
৩। শুধু প্রভাব বিস্তার নয়, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রেও এই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের মধ্যে আশ্চর্যজনক মিল রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালীন ভারতীয় অর্থনীতির আমূল সংস্কারের জন্য বেপরোয়া ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ঠিক তেমনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মাষ্টারস্ট্রোক ছিল নোটবন্দী। দেশের অর্থনীতির সংস্কারে রাতারাতি ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
৪। ১৯৮২ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সময়েও ভারত-পাকিস্তান তরজা ছিল বড় রাজনৈতিক সমস্যা। সেইসময়ও শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী দুই দেশের সীমান্ত যুদ্ধ তথা সীমান্ত সমস্যা নিয়ে একাধিক সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ঠিক তাঁরই দেখানো পথে হেঁটে ভারত-পাক সীমান্তে জঙ্গি কার্যকলাপ, জঙ্গি অনুপ্রবেশ রুখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তাঁর উদাহরণ হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরের উরি সেনাছাউনিতে জঙ্গি হামলায় ১৯ জন সেনা জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় পাকিস্তানে পালটা হামলার কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোদী। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ঢুকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরিকল্পনার অন্যতম রূপকার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
৫। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে অন্যতম মিল হল ইন্দিরা গান্ধী যেমন একাধিক সিদ্ধান্ত সংসদের অধিবেশনে পেশ করার আগেই তা বহাল করতেন ঠিক সেই ভাবেই কোনও সিদ্ধান্তকে ফেলে রাখার পক্ষপাতী নন নরেন্দ্র মোদীও। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী পদে আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৪০টি বিল এমনকি বাজেট পেশের আগেও সংসদের অধিবেশনে এই বিষয় নিয়ে কোনও আলোচনাতেই জাননি তিনি।
এহেন দুই প্রবল প্রতাপশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সামনে থেকে দেখতে পাওয়া গর্বের। আগামী ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুর্গাপুরে আসছেন নরেন্দ্র মোদী। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা প্রধানমন্ত্রীকে এক পলক দেখতে ১৯৮২ সালের দুর্গাপুরে যেমন জনজোয়ার দেখা গিয়েছিল আগামী ২রা ফেব্রুয়ারি আবারও দুর্গাপুর দেখবে জনজোয়ার। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আগেও হয়েছে পরেও হবে কারণ ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হয়।