নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধান। এই বাংলায়-র খবরের জেরে দুর্গাপুরে অবৈধ হোর্ডিং খোলার কাজ শুরু করলো দুর্গাপুর পুরসভা। শনিবার সকাল থেকে দুর্গাপুরের স্টীল টাউনশিপ এলাকার ভগত সিং মোড় ও মহিস্কাপুর মোড় সংলগ্ন শরৎচন্দ্র রোডের সমস্ত বেআইনিভাবে লাগানো হোর্ডিং খুলে ফেলা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক দিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ধাপে ধাপে সমস্ত বেআইনি হোর্ডিং চিহ্নিত করে তা খুলে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বুধবারই চ্যানেল এই বাংলায়-র তরফে বেআইনি হোর্ডিং ব্যবসার অন্তর্তদন্ত প্রতিবেদনের প্রথম ভাগের সংস্করণ প্রকাশ হওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ ও দুর্গাপুর পুরসভা। তাই দীর্ঘদিন দিন ধরে চলে আসা এই বেআইনি হোর্ডিং ব্যবসার রমরমা বাজার বন্ধ করতে এবং সরকারী রাজস্বের ব্যাপক ক্ষতি কমাতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। তবে পুরসভা কর্মীদের হোর্ডিং খুলতে গিয়েও বেশ কয়েকবার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় বেশকয়েকজনের অচেনা মুখও যেমন ছিল তেমনি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও হোর্ডিং খোলার বিষয়ে পুরসভা কর্মীদের প্রশ্ন করতে দেখা যায়। বেশকিছু স্থানীয় বিজ্ঞাপন এজেন্সি পুরসভা কর্তৃপক্ষের আধিকারিকদের হোর্ডিং খুলতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, হোর্ডিং ব্যবসা সংক্রান্ত একটি মামলা এখনও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারাধীন, তাহলে কী করে পুরসভা সেইসমস্ত হোর্ডিং খুলে ফেলছে? তাদের আরও বক্তব্য, দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রনাধীন স্টিল টাউনশিপ এলাকায় দুর্গাপুর পুরসভা কীভাবে হস্তক্ষেপ করছে? কিন্তু তারা এটা জানেন না যে দুর্গাপুর পুরসভা ও ডিএসপি যৌথভাবে এই বেআইনি হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। পাশাপাশি পুরসভা আধিকারিকদের বক্তব্য, কোনও বৈধ হোর্ডিংয়ের ক্ষতি করা হচ্ছে না এই অভিযানে, শুধুমাত্র অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা হোর্ডিং খুলতেই তাদের এই অভিযান। স্বয়ং দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি জানিয়ে দিয়েছেন, কোনোভাবেই দুর্গাপুর শহরের এই দৃশ্যদূষনকে বরদাস্ত করা হবে না। অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এই বেআইনি হোর্ডিং ব্যবসা। তিনি এও জানিয়েছেন, অবিলম্বে ধাপে ধাপে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের অবৈধ হোর্ডিং খুলে ফেলা হবে। মেয়রের এই বক্তব্যে স্বভাবতই খুশি ইস্পাত নগরীর বাসিন্দারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, অবৈধ হোর্ডিং এমনভাবে লাগানো ছিল যে তারা বাড়ির বারান্দা থেকে প্রধান সড়ক পর্যন্ত দেখতে পেতেন না। এখন এই বেআইনি হোর্ডিংগুলি খুলে দেওয়ার পর যেন বন্ধ ঘরের দরজা খুলে দেওয়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমরা যাদের নিজেদের ভোট দিয়ে এলাকার কাউন্সিলার তৈরি করেছি, জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাঁরা কী করে এতদিন চুপ করে আছেন এই অবৈধ হোর্ডিংয়ের বিষয়ে? কেনই বা তাঁরা দুর্গাপুর পুরসভার হোর্ডিং খুলতে যাওয়া বাধাপ্রাপ্ত কর্মীদের সাথে সহযোগিতা করছেন না? আমরা মনে করি অবিলম্বে আমাদের নিজ নিজ এলাকার কাউন্সিলারদের উচিত দুর্গাপুর পুরসভা ও ডিএসপির সঙ্গে সহযোগিতা করে অবিলম্বে এই অবৈধ হোর্ডিং কাঠামো সমেত সরিয়ে দেওয়া হোক। চ্যানেল এই বাংলায়-র পক্ষ থেকে আমরা যে অন্তর্তদন্ত শুরু করেছিলাম তা সরকারী তৎপরতা দেখে আনন্দিত ও আশা করি ডিএসপি ও দুর্গাপুর পুরসভা একযোগে আরও দ্রুততার সঙ্গে এই অভিযান চালান এবং এই শহরকে স্মার্ট সিটির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ হোন।