নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ ফাস্টফুডের খ্যাতিতে সবার আগে যখন কলকাতার নাম উঠে আসে তখন সেই কলকাতার থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই দুর্গাপুরও। যত দিন এগোচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ফাস্ট ফুডের চাহিদা। সন্ধ্যা নামলেই দুর্গাপুর শহরের আনাচা-কানাচে এসে হাজির হচ্ছে ফাস্ট ফুডের মুভিং ভ্যানগুলি। কিন্তু কোথা থেকে আসছে এই গাড়িগুলি? আদৌ কি এইসমস্ত গাড়িগুলি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করার অনুমোদন রয়েছে? কিন্তু তাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই শহরবাসীর। সন্ধ্যে নামলেই স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে শুরু করে সকলেই ভিড় জমাচ্ছেন এই সমস্ত ফাস্ট ফুড কাউন্টারগুলিতে। জিভে জল আনা চাউমিন, ফ্রায়েড রাইস, চিকেন ললিপপ, মোমো সহ আরও কতকিছু সেই সুস্বাদু খাবারের নাম। আর সেই সুস্বাদু খাবারের টানেই সেইসমস্ত খাবারের গুনগত মান যাচাই না করেই খাদ্য রসিকেরা ঝাঁপিয়ে পড়ছেন সেইসব খাবারের ওপর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্গাপুর শহর জুড়ে বর্তমানে ১০০টিরও বেশি এরকম ফাস্ট ফুডের গাড়িগুলি রমরমিয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কীভাবে তৈরী হচ্ছে এই গাড়িগুলি? ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করার জন্য এই গাড়িগুলি তৈরীই বা কোথায় হচ্ছে? জানা গেছে, এইসমস্ত খাবারের দোকানের মালিকরা কম দামে পুরনো মালবাহী গাড়িগুলি কিনছেন এরপর রাতারাতি সেই গাড়িগুলিকে মডিফায়েড করে এইসমস্ত মুভিং ফাস্টফুড ভ্যান তৈরী করে নেওয়া হচ্ছে। সবথেকে আশ্চর্যের হল, এইসমস্ত গাড়িগুলির না আছে কোনও বৈধ কাগজ, না আছে কোনও ট্রেড লাইসেন্স, না আছে প্রশাসনিক বৈধতা। পাশাপাশি খাবারের দোকান করতে গেলে পুরসভা থেকে যে ফুড লাইসেন্স করাতে হয় তাও এইসমস্ত দোকানগুলির একটিতেও নেই। তাহলে কী করে দিনের পর দিন এই ফাস্ট ফুড কাউন্টারগুলিকে ব্যবসা চালানোর অনুমতি দিচ্ছে প্রশাসন? কেনই বা এদের এই বেআইনিভাবে মুভিং ভ্যান তৈরি করে তা শহরের আনাচে কানাচে খাবার বিক্রির কাজে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না? আর প্রশাসনের এই উদাসীনতা আর বেকার যুবকের দোহায় দিয়েই এই সমস্ত ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে মুখরোচক খাবারের লোভ দেখিয়ে তাদের জীবন নিয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। কারণ শহরের বিভিন্ন খোলা পরিবেশে খাবারের গুণমানের দিকে খেয়াল না রেখেই এইসমস্ত খাবার বিক্রির ফলে যেমন ক্রেতাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি পুরসভার উদাসীনতার জেরে প্রত্যেক মাসে কয়েক লক্ষ টাকার রাজস্বেরও ক্ষতি হচ্ছে। যদি ধরে নেওয়া যায় শুধু মাত্র রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ তাহলে যানবাহন যারা চালান তারা সকলেই জানেন যানবাহনের জন্য লাগে রোড ট্যাক্স, বীমা, পারমিট, ফিটনেস সার্টিফিকেট, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বৈধতা কিন্তু এইসব ফুড ভ্যানগুলির কোনওটিই নেই। স্বভাবতই রাজ্য সরকারের RTO বিভাগ থেকে রোড ট্যাক্স, ফিটনেস ও পারমিটের জন্য কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতি হচ্ছে রাজস্ব। বিভিন্ন বীমা সংস্থা থেকে এইসব গাড়িগুলি বীমা না করানোয় ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক পরিমাণে। যদি কোনোদিন এইসব গাড়ি দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে দুর্ঘটনায় আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তিরাও কোনও বীমার সুবিধা পাবেন না। যখন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদ শহরের অলিতে গলিতে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে প্লাস্টিক বন্ধ করার যে উদ্যোগ নেন তাদের মাথায় কী একবারও আসে না যে এইসমস্ত ফুড ভ্যানগুলি থেকে যে পরিমাণ দূষণ হয় তা যথেষ্ট তাদেরকে জরিমানা করার জন্য। পুরসভার অনুমতি ছাড়া কোনও ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে পারেন না, সেখানে কী করে পুরসভার নাকের ডগায় এই ফুড ভ্যানগুলি বিনা ফুড লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্সে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানেও ক্ষতি হচ্ছে মোটা টাকার পুরসভার রাজস্ব। যদি ভালো করে অনুসন্ধান করা হয় তাহলে হয়তো দেখতে পাওয়া যাবে এমন অনেক ফুড ভ্যান রয়েছে যেগুলি কোনও না কোনও রাজ্য থেকে চুরি করা গাড়ি ও তার খোলনলচে পালটে নতুন করে রং করে দুর্গাপুরের বুকে চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন এই ব্যবসায়ীরা। চ্যানেল এই বাংলায়-এর প্রশ্ন একটাই, শুধুমাত্র বেকারদের রুজি-রুটির রক্ষার নামে আর কতদিন এইভাবে অনিয়ম ও বেআইনি ব্যবসা চলবে দুর্গাপুরের বুকে?