eaibanglai
Homeএই বাংলায়সরকারী জমি দখল করে যত্রতত্র গজিয়ে উঠছে মন্দির, নিশ্চুপ প্রশাসন

সরকারী জমি দখল করে যত্রতত্র গজিয়ে উঠছে মন্দির, নিশ্চুপ প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ ইদানীং সময়ে শহর দুর্গাপুরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে ঘটে গেছে বিভিন্ন ঘটনা। দুর্গাপুরবাসীর কাছে সেইসমস্ত ঘটনার খুঁটিনাটি বিবরণ সংবাদমাধ্যম হিসেবে সঠিকভাবে তুলে ধরেছে এই বাংলায় নিউজ পোর্টাল। শহরের আনাচে-কানাচে, অলিতে-গলিতে ঘটে যাওয়া ছোট-বড় না অজানা ঘটনা দুর্গাপুরবাসীর সামনে তুলে ধরায় আমাদের কাজ। সেই কাজের তাগিদেই শহরের আনাচে-কানাচে ঢুঁ মেরে এই বাংলায় খুঁজে পেয়েছে আরও এক তথ্য। সম্প্রতি বেশ কয়েক মাস ধরেই দুর্গাপুর শহরের রাস্তা-ঘাট, রাস্তার মোড়, প্রাচীন গাছের নীচে যত্রতত্র নজরে পড়ছে গ্রহ মহারাজের (শনি মন্দির), হনুমান জী, মা কালীর মতো বিভিন্ন দেব-দেবীর মন্দির। স্বাভাবিক নজরে দেখলে এই নিয়ে আমাদের কারোরই কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ, সর্ব-ধর্ম সমন্বয়ে আমরা সকলেই সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল। তাই আমাদের আপদে-বিপদে আমরা সকলেই ভগবানের শরণাপন্ন হব একথা আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। কিন্তু একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাওয়া যাবে শহরজুড়ে যত্রতত্র মন্দির নির্মানের এক হিড়িক পড়ে গিয়েছে গোটা শহরজুড়ে। প্রতি ১০০-২০০ মিটার পর পর কোনও না কোনও দেবদেবীর অবৈধভাবে জমি দখল করে চলছে মন্দির নির্মান। এই নিয়ে শহরবাসীর মনে একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এই মন্দির নির্মানের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে। যেমনঃ
১। ইদানীং দুর্গাপুর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে, রাস্তার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে সরকারী জমি বেআইনিভাবে দখল করে রাতারাতি মন্দির নির্মান করা হচ্ছে। কিন্তু এই মন্দির নির্মানের জন্য কে বা কারা অনুমতি দিচ্ছেন? বা আদৌ কোনও অনুমতি নেওয়া হচ্ছে কিনা তা সকলেরই অজানা।
২। মন্দির নির্মান শেষ হলেও তারপরে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানীয় জলের যোগান। কিন্তু বিদ্যুৎ সংস্থার বিনা অনুমতিতেই রাস্তার লাইটপোষ্ট থেকে বিদ্যুৎ চুরি করে মন্দির আলোকিত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মন্দির নির্মান শেষ হতেই পানীয় জলের মেন লাইন ফুটো করে সেখান থেকে অবৈধভাবে জল সংযোগও নিয়ে নেওয়া হচ্ছে মন্দিরের ভেতরে। অথচ এবিষয়ে প্রশাসনের কোনও মাথাব্যাথা নেই। অন্যদিকে মন্দিরে বেআইনিভাবে জল সংজোগ নিতে গিয়ে রাস্তার ধারে জলের মেন লাইনে যেভাবে ফুটো করা হচ্ছে তাতে নর্দমার নোংরা জলও পানীয় জলের সঙ্গে প্রবেশ করছে। ফলে যেকোনোদিন পানীয় জল দূষিত হয়ে তা শহরবাসীর কাছে মহামারীর আকার ধারন করবে না তা কি হলফ করে বলতে পারবেন জল দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা?
৩। দুর্গাপুর জুড়ে গত কয়েক মাস ধরে যে মন্দির নির্মানের হিড়িক উঠেছে সেই মন্দির নির্মানের জন্য প্রয়োজন মোটা অঙ্কের টাকা। কিন্তু মন্দির নির্মানের সেই মোটা টাকার যোগান কোথা থেকে হচ্ছে তার উত্তর আমাদের কারোর জানা নেই? এমন নয়তো যে এই মন্দিরের নির্মানের টাকার যোগান দিয়ে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের মগজ ধোলাই করে কোনও রাজনৈতিক দল তাঁদের ভোট ব্যাঙ্ক শক্তিশালী করতে ক্রমাগত ধর্মের নামে তাঁদের রাজনৈতিক এজেন্ডা চালিয়ে যাচ্ছে? শুধু তাই নয়, ইদানীং মন্দির নির্মান নিয়ে যে রাজনৈতিক বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে তাতে যত্রতত্র মন্দির নির্মানকে কেন্দ্র করে ক্রমশ অশান্ত হচ্ছে রাজনৈতিক পরিবেশ। যা শহরবাসীর জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।
৪। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত যে মন্দিরে মানুস-জন আসছেন পুজো-অর্চনা করতে, সন্ধ্যে নামতেই সেই মন্দিরের পেছনেই চলছে নানান অসামাজিক কার্যকলাপ। কোথাও কোথাও তো মদ-গাজার আখড়ায় পরিণত হয়েছে মন্দিরগুলি। শহর জুড়ে এমন ধরণের অভিযোগও অমূলক নয়। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন মন্দির এবং ধর্মীয় স্থান মনে করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করতে পারছে না সেইসমস্ত স্থানে।

এই বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলার এবং অন্যান্য নেতৃত্বদের বেআইনি জমি দখল করে মন্দির নির্মানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁদের সাফাই, ভোটের মুখে সাধারন মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে তারা কোনোরকম হস্তক্ষেপ করতে চান না। কিন্তু তারা এও বলতে ছাড়লেন না যে এই সরকারী জমি দখল করে মন্দির নির্মান চলছে সেটা মোটেও সব রাজনৈতিক দলের জন্য ভালো নয়, বরং এই মন্দির নির্মানের ফলে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলেরই ফায়দা বেশি বলে মনে করছেন তারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্গাপুরের এক ওয়ার্ডের কাউন্সিলারকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ভোটের আগে শহরের শান্তি বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসনের উচিত শহরের সমস্ত অবৈধভাবে জমি দখল করে নির্মিত মন্দির এবং ধর্মীয় স্থানগুলির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। কোনোরকম অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হলেই যাতে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। চ্যানেল এই বাংলায় কারোরই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে না, ভবিষ্যতেও করবে না। কিন্তু শহর দুর্গাপুরের একটি বিশ্বাসযোগ্য ও দায়িত্ববান সংবাদমাধ্যম হিসেবে শহরের শান্তি-শৃঙ্খলা ও ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি আমরা। যদি আজকের এই প্রতিবেদন পড়ে কারোর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লেগে থাকে তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। এই বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করতেই আমাদের আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments