নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ ফের নৃশংস ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজ্য। আবারও শুধুমাত্র সন্দেহের বশে জীবন দীপ নিভে গেল এগারো বছরের এক কিশোরের। চোর সন্দেহে অপবাদ দেওয়ায় সেই অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল ছোট্ট নিজাম। ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর মানিকতলার। নিজামউদ্দিন মণ্ডল নামে এগারো বছরের ওই কিশোর তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মানিকতলায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণীর ওই পড়ুয়াকে কয়েকদিন আগে পাড়ার এক প্রতিবেশী টাকা চুরির বদনাম দিয়েছিল। সেই বদনামের পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিল ওই কিশোর। চুরির অপবাদ দেওয়ায় এর আগেও একবার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু সে যাত্রায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল নিজাম। কিন্তু সোমবার ফের মা-বাবা কর্মসূত্রে বাইরে চলে যাওয়ার পর নিজের ঘরেই কেরোসিন তেল ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে নেই নিজাম। স্থানীয় প্রতিবেশী জামানউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি আগুন দেখে তাদের ঘরে গিয়ে নিজামউদ্দিনকে উদ্ধার করে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বারাসাত হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে সেখানেই রাতে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালীন জবানবন্দীতে নিজাম বার বার জানিয়েছে, সে চুরি করে নি। তাকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কে বা কারা আদপে তাকে চোর অপবাদ দিয়েছিল তা জানানোর সুযোগ পায় নি ছোট্ট নিজাম। কিন্তু আর কত? আর কত নিরীহ প্রাণ একের পর এক শুধু সন্দেহের বশে নিভে যাবে তার উত্তর কে দেবে? কোথায় গেছে আমাদের সমাজ? বর্তমানে ফেসবুক, ট্যুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের অপব্যহার করে যেভাবে মানুষের মনে সন্দেহের বীজ বপন করা হচ্ছে তা থেকে কবে মুক্তি পাবে মানুষ? কোথাও চোর, কোথাও ছিনতাইবাজ কোথাও ধর্ষণকারী আখ্যা দিয়ে যাচাই না করেই যেভাবে মানুষ আইনকে নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে তা রাজ্য তথা দেশের পক্ষে মোটেই ভালো খবর নয়। শুধুমাত্র সন্দেহের বশে যেভাবে আজ নিজাম নামের ছোট্ট শিশুটি এই বয়সে লোক লজ্জা ও বাবা-মায়ের বকুনির ভয়ে জীবনের চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল তার দায় কার? এ কোনও অপমৃত্যু নয়, এ হল প্রকাশ্য খুন। আর এই খুনীদের দ্রুত সমাজ থেকে উৎখাত করতে না পারলে বর্তমান সমাজকে সন্দেহের এই অভিশপ্ততা থেকে মুক্ত করা অসম্ভব।