নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ ২০১০ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগের পুরুলিয়ার বাগবিন্ধা গ্রাম আর বর্তমান বাগবিন্ধা গ্রামের মধ্যে আলাদা কোনও তফাত নেই। কারণ, ২০১০ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের সেই ভয়াল দিন আজও ভুলতে পারেন নি বাগবিন্ধা গ্রামের বাসিন্দা ৩০টির মতো পরিবার। কারণ ওই দিনেই মাওবাদী অধ্যুষিত ওই বাগবিন্ধা গ্রামে হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা। প্রকাশ্য দিনের আলোয় গ্রামের ঢুকে মাওবাদীরা খুন গুলি করে হত্যা করেছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের একজন পঞ্চায়েত মহিলা প্রধান সহ ৬ জন নেতাকর্মীকে। সেই নৃশংস হত্যালীলা চোখের সামনে দেখার পর আর ঠিক থাকতে পারেন নি গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দারা। রাতারাতিই ভিটেমাটি ছেড়ে গ্রাম ফাঁকা করে পালিয়ে বেঁচেছিলেন অচলা সিংহ, শম্ভুনাথ সিংহ, কালাচাঁদ, ভুতনাথ ও জগবন্ধু সিংহ সহ প্রায় ৩০টি পরিবারের শ-খানেক সদস্যরা। খুন হওয়া ফরওয়ার্ড ব্লক নেতাদের মধ্যে ছিলেন চাপলা গোড়াইত ,তিঙ্কর সিংহ ,গোবর্ধন সিংহ ,গোপেশ্বর মাহাতো ,তপন সিং সর্দার ,অনন্ত মাহাতো ও অর্জুন মুড়া। কিন্তু এই ভয়াবহ ঘটনার পর কেটে গেছে বহু সময়। মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে বহু সুযোগ-সুবিধা ও সাহায্যের ঝুলি নিয়ে তৎকালীন বহু নেতা, রাজনীতিক ছুটে গেছেন বাগবিন্ধা গ্রামে। রাতারাতি পুরুলিয়ার এক অখ্যাত গ্রাম বাগবিন্ধা উঠে এসেছিল প্রচারের আলোয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। বাম জমানা শেষে রাজ্যে পালাবদল হলেও বাগবিন্ধা গ্রামের শ-খানেক মানুষ যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই রয়ে গেছেন। আর মাওবাদীদের গুলিতে স্বজন হারানো পরিবারগুলির চাপা কান্না মিলিয়ে গেছে সময়ের বহমানতায়। কিন্তু ২০১০ থেকে আজ ২০১৯। দীর্ঘ এই সাড়ে আট বছরে ওই সমস্ত গ্রামবাসীদের তাদের ভিটেতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়নি কেউই। এই বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন প্রশাসন। যত সময় পেরিয়েছে ততই সকলে ভুলে গিয়েছেন সেদিনের সেই ঘটনার বীভৎসতা। কিন্তু সেই ঘটনায় যারা স্বজন হারিয়েছিলেন তারা কী ভুলতে পেরেছেন তাদের কাছের মানুষগুলোকে? মাওবাদীদের গুলিতে নিহত টিঙ্কর সিংহের মা শকুন্তলা সিংহ, চপলা গোড়াইয়ের পুত্র বিশ্বনাথ গড়াই ও নিহত অননথো মাহাতোর নাতি বিকাশ মাহাতোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল গুলিকাণ্ডের পর ভেঙে গিয়েছে গোটা পরিবার। সেইসময় বাম সরকার ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ঘটনার আট বছর পেরিয়ে গেলেও মেলেনি কিছুই| দীর্ঘ নিঃশ্বাস বাগবিন্ধা গ্রামের স্বজন হারানো পরিবারের।