নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ ভোট গণনা পরবর্তী এবং গত কয়েকদিন ধরে খবরের শিরোনামে শিল্পশহর দুর্গাপুর। ভোট পরবর্তী হিংসা, রহস্যজনক মৃত্যু থেকে শুরু করে পুলিশ এবং সিভিক পুলিশের তোলাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হয়েছে দুর্গাপুর। ঘটনা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, সিভিক পুলিশের মারে গুরুতর জখম হয় এক গাড়ির চালক। ঘটনায় ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদের জেরে তোলাবাজিতে অভিযুক্ত দুই সিভিক পুলিশ এবং এক পুলিশ আধিকারিককে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে হয় আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। কিন্তু এত কিছু সত্বেও দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ এবং সিভিক পুলিশের তোলাবাজি এখনও অব্যহত। যেমন ধরা যাক অজয়ঘাট থেকে শুরু করে মুচিপাড়া সড়ক পর্যন্ত দিনের যেকোনো সময় রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে চোখ ফেরালেও নজরে পড়বে পুলিশের গাড়ি। তবে তা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য টহলদারি নয়, অজয় ঘাট থেকে বালি ও পাথর বোঝাই গাড়িগুলি থেকে তোলা আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে সিভিক পুলিশ সহ পুলিশ আধিকারিকেরা। প্রতি গাড়ি পিছু ১০ থেকে ৫০ টাকা বা তারও বেশি তোলা, এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। কাঁকসা থানা এলাকা এবং পানাগড় ট্রাফিক চেকপোস্টের নিয়ন্ত্রণাধীন বামুনাড়া, রুপগঞ্জসহ এরকমই চার থেকে পাঁচ জায়গায় নিত্যদিন সিভিক পুলিশ এবং কোনও কোনও সময় পুলিশ আধিকারিকদের তত্তাবধানে চলে তোলাবাজি। আর মূলত এই তোলাবাজি থেকে বাঁচতেই পাথর এবং বালি বোঝাই গাড়ির চালকেরা ভিড়প্রবণ এই রাস্তায় গতি নিয়ন্ত্রণের তোয়াক্কা না করেই দুরন্ত গতিতে ট্রাক ও লরি নিয়ে যাতায়াত করে। ফলস্বরপ অজয়ঘাট থেকে মুচিপাড়া পর্যন্ত সড়কপথ বর্তমানে হয়ে দাঁড়িয়েছে মৃত্যুপথ। সড়ক দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের হত বা আহত হওয়ার ঘটনা এই এলাকায় এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার অন্যতম কারণ হিসেবে পুলিশি তোলাবাজির রমরমা কারবার এবং গাড়ি চালকদের ওভারলোডেড গাড়ি নিয়ে বেপরোয়া গতিকেই মূলত দায়ী করছেন এলাকাবাসীরা। তাদের অভিযোগ, বালি এবং পাথরের গাড়ি থেকে তোলা আদায়ের লোভে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়াররা গাড়ি দাঁড় করিয়ে তোলা আদায় করছে ফলে ট্রাক চালকরা ক্রমে বেপরোয়া হয়ে উঠছে যার ফলে প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষের। গত কয়েকদিন আগেই প্রশাসনিক তরফে আচমকা অভিযান চালিয়ে এই রাস্তা থেকেই ২৭টি অবৈধ ওভারলোডেড গাড়ি আটক করেছিলেন দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক অনির্বান কোলে। কিন্তু তাসত্বেও কোনোভাবে আটকানো যাচ্ছে না বেআইনি বালি, পাথরের রমরমা কারবার এবং তোলাবাজি। এলাকাবাসীদের বক্তব্য, প্রশাসনিক আধিকারিকদের অভিযানে কয়েকদিন বালির কারবার বন্ধ থাকলেও ফের পুলিশের অঙ্গুলিহেলনে শুরু হয়ে যাচ্ছে অবৈধ বালি ও পাথর পাচার। কারণ, অবৈধ বালি ও পাথর পাচারের ব্যবসা বন্ধ থাকলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তোলা আদায়ের কাজ। স্বভাবতই এহেন অভিযোগ আবারও প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে পুলিশি তোলাবাজির চিত্রকে। যেখানে সাধারণ মানুষের পথনিরাপত্তার স্বার্থে রাজ্য সরকারের তরফে সিভিক পুলিশদের মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে তারা নিজেদের দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বেআইনি তোলাবাজির কাজে। এতটাই তাদের দাপট যে রাতের অন্ধকারের পাশাপাশি প্রকাশ্য দিবালোকেও বিভিন্ন ওভারলোড গাড়ি বা বালির গাড়ি থেকে নির্লজ্জের মতো তোলা আদায় করতেও পিছুপা হচ্ছে না তারা। তার এক উজ্জ্বল চিত্র দেখতে পাওয়া যাবে যেকোনও সময় বামুনাড়া থেকে মুচিপাড়া সংযোগকারী মোড়ের মাথায় সিভিক পুলিশের হাত পেতে টাকা নেওয়ার দৃশ্য। যার প্রতিবাদ করতে গেলেই ঘটছে দুর্গাপুরের বেনাচিতির মতো ঘটনা। মূলত কিছু টাকার লোভে এই সিভিক পুলিশদের স্থানীয় থানা বা পুলিশ আধিকারিকদের তরফে এতটাই স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে যে প্রকাশ্যে প্রতিবাদী সাধারণ মানুষকে পেটাতেও হাত কাঁপছে না তাদের। আর তাদের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং বেপরোয়া তোলাবাজির জেরে চরম বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্ত কতদিন? দিনের পর দিন পুলিশের এহেন আচরণে সাধারণ মানুষ যে কতটা ক্ষুব্ধ তা তাদের বক্তব্যেই পরিষ্কার। এলাকাবাসীদের বক্তব্য, এহেন পুলিশি তোলাবাজি এবং অবৈধ বালির কারবার বন্ধ না হলে যেকোনো দিন সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আছড়ে পড়তে পারে যেকোনোভাবে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।