নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ এই বাংলায় নিউজ পোর্টালের খবরের জের। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে বেসরকারী নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বেকার যুবক ও অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তারক্ষীদের দিনের পর দিন প্রতারনা করার চাঞ্চল্য খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসল পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ন্ত্রনাধীন উপশ্রম বিভাগ দফতর (DLC)। কয়েকদিন আগে এই বাংলায় নিউজ পোর্টালে তরফে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছিল, শিল্প শহর জুড়ে বেকার যুবক, যুবতী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে দুর্গাপুরে একাধিক বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগকারী সংস্থাগুলি দৈনিক ১২ ঘন্টা আবার কোথাও কোথাও ২৪ ঘন্টা কাজ করালেও তাদের মাসিক বেতন দিচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার মতো, অর্থাৎ প্রত্যেক দিনের হাজিরা মাত্র ১৭০ টাকা বা তারও কম। অথচ এই সংস্থাগুলি যে সমস্ত ব্যাংক এটিএম, শপিং মল, হোটেল, ফ্ল্যাট কিংবা আরো বিভিন্ন জায়গায় এই নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করছে সেখানে এদের মাইনে বাবদ মালিকদের কাছ থেকে মাথাপিছু দ্বিগুণ টাকা দাবি করলেও মাসের শেষে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে মাত্র ৩০০০ টাকা কিংবা তার একটু বেশি হলে ৫ হাজার টাকা তুলে দিচ্ছে। ফলে কোন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ কারী সংস্থার শহর জুড়ে যদি ১০০ নিরাপত্তা রক্ষী কাজ করে তাহলে তাদের মাইনে থেকে মাথাপিছু মাসে ৫০০০ টাকা করে সরিয়ে নিয়ে এই সংস্থাগুলি বছরে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করছে অসহায় মানুষ গুলির সঙ্গে। সম্প্রতি বেশ কিছু নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কথা বলে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালে এই খবর প্রকাশ করার পর আমরা সরাসরি যোগাযোগ করেছিলাম দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন উপশ্রম বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে। আমাদের কাছ থেকে এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়ার পর তারা জানান, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নিরাপত্তারক্ষী ব্যক্তিগতভাবে আগেও অভিযোগ করেছেন, তবে সংবাদ মাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হওয়ার পর তারা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এই মুহূর্তে যে সমস্ত বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী কাজ করে চলেছেন তাদের ক্ষোভ সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। তাদের অভিযোগ সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে আছে। তাদের অভিযোগ, সরকারী উপশ্রম বিভাগ বর্তমানে বাস্তুঘুঘুর আড্ডায় পরিণত হয়েছে। উপশ্রম বিভাগের ইন্সপেক্টরদের কাজ হক বেসরকারি এই সমস্ত নিরাপত্তারক্ষীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা সেখানে এই সমস্ত কর্মীরাই দুর্গাপুর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা একাধিক নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগকারি বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করছে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। তাদের আরও অভিযোগ এই সমস্ত নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগকারী সংস্থাগুলি কর্মী নিয়োগের সময় সংস্থার পোশাক, আই কার্ড এই সমস্ত কিছু দেবার জন্য এই অসহায় মানুষগুলোর কাছ থেকে কখনো ১০০০ টাকা আবার কখনো দুই হাজার টাকা করে অগ্রিম আদায় করছে। অথচ এদের যেমন প্রাপ্য বেতন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তেমনি সরকারি বাধ্যতামূলক ই এস আই অথবা পিএফ সংক্রান্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যার পুরো টাকাটাই আত্মসাৎ করছে এই সংস্থার মালিকরা। বর্তমানে সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় শ্রমিক ইউনিয়ন থাকলেও আশ্চর্যজনকভাবে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের এখনো পর্যন্ত কোন ইউনিয়ন নেই। সব থেকে দুঃখের বিষয় হল রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক মহাশয় এই জেলার হলেও তিনিও এই গরীব এবং অসহায় নিরাপত্তারক্ষীদের পাশে দাঁড়াননি। আর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল? নিরাপত্তারক্ষীরা জানাচ্ছেন, এই সমস্ত বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগকারী সংস্থাগুলি টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের মুখ বন্ধ করে রেখেছে। ফলে মাসিক মোটা টাকা মাসোহারা পেয়ে যাবে এই সমস্ত নেতা নেতৃত্ব নিরাপত্তারক্ষীদের ইউনিয়ন তৈরীর বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। ফলস্বরূপ দিনের পর দিন এবং বছরের পর বছর এভাবেই প্রতারিত হচ্ছেন শিল্পাঞ্চল এর বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীরা। কিন্তু কত দিন? যেখানে এই সমস্ত শ্রমিক বা কর্মীদের জন্য সরকারি তরফে ডিএলসি অর্থাৎ ডিপার্টমেন্ট অফ লেবার কমিশন নিয়োগ করা হয়েছে সেখানে তারা যদি নিজেদের দায়িত্ব থেকে সরে আসেন তাহলে এই সমস্ত অসহায় মানুষরা কাঁধের কাছে নিজেদের অভিযোগ জানাবেন? তাহলে শুধুমাত্র আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া তেই কি পার পেয়ে যাবে এই সমস্ত অসৎ ব্যবসায়ীরা? নাকি বছরের পর বছর ধরে প্রতারিত হওয়ার পর অবশেষে নিজেদের প্রাপ্য মজুরি পাবে নিরাপত্তাকর্মীরা। আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে শিল্প শহর।
এই বাংলায়-র খবরের জের, বেসরকারী নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সরকারী উপশ্রম বিভাগের
RELATED ARTICLES