eaibanglai
Homeএই বাংলায়কাটমানি কান্ডের রেশ, দুর্গাপুরের শ্রম দফতর (ডি এল সি) এবং পিএফ দফতর...

কাটমানি কান্ডের রেশ, দুর্গাপুরের শ্রম দফতর (ডি এল সি) এবং পিএফ দফতর বর্তমানে কী “বাস্তুঘুঘুর আড্ডা”?

নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়: রাজ্যজুড়ে কাটমানি কান্ডের জের এখন আর নতুন কথা নয়। খবরের কাগজ থেকে শুরু করে নিত্যদিনের টিভি চ্যানেলে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীদের কাটমানি আদায় এবং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই কাঠ মানি সাধারণ মানুষকে ফেরত দেওয়ার কথা ঘোষণা করার পর থেকে রাজ্য রাজনীতি সরগরম এই কাটমানি ইস্যুতে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ এর পর থেকে সাধারণ মানুষ শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কাটমানি ফেরতের দাবি জানিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সরব হয়েছেন। ব্যতিক্রম নয় দুর্গাপুরও। শিল্প শহর তার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে কাটমানি বিতর্কে নাম জড়িয়েছে একাধিক তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের। সেই কাটমানি কাণ্ড যখন রাজ্য জুড়ে বিতর্কের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন শিল্প শহরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক শ্রমিকদের পিএফ এবং ই এস আই এর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। শুধু বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে নয়, এই দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে অবস্থিত শ্রমবিভাগ এবং পিএফ অফিসের একাধিক সরকারি আধিকারিকেরর বিরুদ্ধেও। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে শ্রমিকদের একাংশ বর্তমান উপশ্রম বিভাগ এবং পিএফ অফিসকে দুর্নীতির আঁতুড়ঘর বলে উল্লেখ করেছেন। এহেন অভিযোগের জেরে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে এই সমস্ত দপ্তরে কর্মরত সরকারি আধিকারিকদের স্বচ্ছতা নিয়েও? দুর্গাপুরের বুকে বর্তমানে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার অধীনে প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিক নানা পদে কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন শ্রমিকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে এই সমস্ত বেসরকারি সংস্থা তাদের প্রত্যেক মাসের বেতন থেকে তাদের প্রাপ্য পিএফ এবং ই এস আই বাবদ মোটা টাকা কেটে নিলেও আদৌ সেই টাকা তাদের একাউন্টে জমা করছেন না। গত দুদিন আগেই অভিযোগ জানিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন দুর্গাপুরের এক বেসরকারি সংস্থার বেশ কয়েকজন কর্মী। তাদের অভিযোগ ছিল গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে ওই সংস্থা তাদের কাছ থেকে ইএসআই এবং পিএফ এর দরুন প্রত্যেক মাসে তাদের মাইনে থেকে টাকা কেটে নিলেও সেই টাকা তাদের একাউন্টে জমা করে নি। ফলস্বরূপ পরিবারের এক অসুস্থ সদস্যকে ইএসআই হাসপাতাল ভর্তি করে ও তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এই বলে যে তার কার্ডে কোন টাকা জমা নেই। এই ধরনের ঘটনা প্রথম নয়, বর্তমানে শিল্প শহরের বুকে এমন বহু শ্রমিক আছেন যারা এই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এই সমস্ত বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে কেন উপশ্রম বিভাগ তথা পিএফ অফিসের আধিকারিকরা কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না? উত্তর খুব স্বাভাবিক, শিল্প শহরের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা তাদের ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানাচ্ছেন, আদপে সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে রয়েছে। পরিষ্কার করে বলতে গেলে বলা যায় এই সমস্ত সরকারি বিভাগগুলির একাধিক আধিকারিক এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ করছেন শ্রমিকদের একাংশ। তাদের অভিযোগ বেসরকারি সংস্থাগুলো সরকারি অফিসারদের মুখ বন্ধ রাখতে মোটা টাকা তাদের মাসোহারা দিয়ে দিনের পর দিন দুর্নীতি করে চলেছেন। ফলস্বরূপ দিনের পর দিন এভাবে প্রতারিত হয়ে আসছেন শ্রমিকরা। একইভাবে তারা জানাচ্ছেন বর্তমান পিএফ অফিস এখন বাস্তুঘুঘুর আড্ডা। তাদের অভিযোগ যে সমস্ত আধিকারিকদের কাজ শ্রমিকদের এই সমস্ত প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা গুলি বিষয়ে নজর রাখা তারাই আজ সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। অবাক লাগে যে শহরের লাগোয়া আরেক শহরে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী বসবাস করেন সেই শহরের শ্রমিকরা আজ তাদের প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। এখানেও দুর্নীতির আঁচ পেয়েছেন শিল্প শহরের শ্রমিকরা। তাদের ক্ষোভ, কোন বেসরকারি সংস্থায় ন্যূনতম বেতনের চাকরি পেতে গেলে বর্তমানে স্থানীয় নেতা নেত্রীদের কাছে বহু আবেদন-নিবেদন করতে হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমানে বহুল প্রচলিত কাটমানিও দিতে হয়। অথচ সেই রাজনৈতিক নেতারা তাদের পাওনা মিটে গেলেই শ্রমিকদের ভুলে যান। কারণ তাদের কাছ থেকে এককালীন কাটমানি পেলেও বর্তমানে শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রত্যেক মাসে তাদের কাছে মোটা টাকা মাসোহারা পৌঁছায়। এইসমস্ত ক্ষেত্রে এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাই বেসরকারি সংস্থাগুলির মালিকদের মোটা টাকা মাসোহারার বদলে মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতারা কাটমানি নিয়ে এইসমস্ত সংস্থাগুলির পিএফ এবং ইএসআই-র ক্ষেত্রে দূর্নীতির কাজে মদত দিচ্ছেন। ফল স্বরূপ এই সমস্ত শ্রমিকদের জন্য ইউনিয়ন তৈরি হয়না, তাদের আপদে-বিপদে পাশে পাওয়া যায় না এই সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের। খুব স্বাভাবিক ভাবেই, দিনের পর দিন পরিস্থিতির চাপে ন্যূনতম বেতনে চাকরি করতে বাধ্য হলেও এই সমস্ত শ্রমিকরা তাদের পাওনা বিভিন্ন রকম সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন এবং প্রতারণার শিকার হন। তাই তাদের আবেদন, রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী যদি শ্রমিকদের এই সমস্ত বিষয়ে সামান্যটুকুও নজর দেন এবং শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা দেখাশোনার জন্য সরকারি তরফে নিয়োগ করা আধিকারিকরা যদি একটু স্বচ্ছ হন তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্ত বেসরকারি সংস্থার কাছে প্রতারিত হবার থেকে রক্ষা পেতে পাবেন শিল্প শহরের শ্রমিক ও তাদের পরিবারগণ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments