নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ এই বাংলায়-র খবরের জের। সরকারী নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নদী ঘাট থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। কয়েকদিন আগেই এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালে এক প্রতিবেদনে আমরা প্রকাশ করেছিলাম যে, বছরের অন্যান্য সময় বাদ দিলেও বর্ষার মরসুমে নদী ঘাট থেকে বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। সেইমতো চলতি বছরে ২৭শে জুন নদী থেকে বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও সেই নিসেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নদীঘাট থেকে বালি তোলার কাজ চলছে রমরমিয়ে। শুধু বৈধভাবেই নয়, অবৈধভাবেও যে বালি মাফিয়ারা দিনের পর দিন নদী থেকে অবৈজ্ঞানিকভাবে বালি তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সেই অভিযোগও উঠেছিল। আর সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হতেই এবার নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। এমনিতেই বালি পাচারে রাজ্যের বিভিন্ন জেলাগুলির মধ্যে উপরের সারিতে রয়েছে বাঁকুড়া জেলা। দ্বারকেশ্বর নদীর বিভিন্ন ঘাট বারো মাসই বালি মাফিয়াদের দৌলতে অবৈধ বালি পাচারের “স্বর্গরাজ্য” হয়ে উঠেছে। পুলিশি অভিযান তোয়াক্কা না করেই লরির পর লরি বালি পাচার তো চলছেই, উপরোন্তু এই বালি মাফিয়ারা এতটাই বেপরোয়া যে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালি পাচারেও তাদের কোনও দ্বিধা নেই। তবে ২৭শে জুন থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারির পরেও বিরামহীন বালি পাচারের খবর একের পর এক সংবাদমাধ্যমে পরিবেশিত হওয়ায় সম্প্রতি চাপ বাড়ে প্রশাসনে ওপর। মূলত সেই চাপের জেরেই গত কয়েকদিনে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর এলাকায় হানা দিয়ে সাফল্য পেয়েছে ভূমি ও ভূমি-রাজস্ব দফতর। নির্ধারিত পরিমানের তুলনায় ওভারলোড করে বালি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে একদিনেই ২১টি বালি বোঝাই লরি আটক করেছে বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক মানস মণ্ডল, মহকুমা ভূমি ও ভূমি-সংস্কার আধিকারিক ফাল্গুনী সৎপথী ও বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ। আটক গাড়ির চালকদের কাছ থেকে স্টক পেপার মিললেও সন্দেহের বশে গাড়িগুলি আটক করা হয়েছে। এবিষয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানিয়েছেন, আটক করা সমস্ত বালির গাড়ি থেকে জল পড়ছিল, তাই অনুমান করা হচ্ছে এই বালি স্টকইয়ার্ড থেকে নয় সরাসরি নদী থেকে তুলে সরবরাহ করা হচ্ছিল। তাই তদন্তের সাপেক্ষে গাড়ির সমস্ত কাগজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। জেলা ভূমি ও ভূমি-সংস্কার আধিকারিক সব্যসাচী সরকার সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আটক করা গাড়িগুলিতে মজুত বালি সরকারী নিয়ম লঙ্খন করে তোলা হলে মালিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে জেলার বিভিন্ন বালি ঘাটগুলিতে হানা দিয়ে অবৈধ বালি খাদান বা বালি মাফিয়াদের কোনও সন্ধান পায়নি প্রশাসনিক আধিকারিকরা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, রাজ্যে বিভিন্ন বালিঘাটগুলি নিলাম করে রাজ্য সরকারের বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। কিন্ত তাসত্বেও দিনের পর দিন এভাবে বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির পরেও সরকার কেন অবৈধ বালি কারবারে লাগাম টানতে ব্যর্থ। সরকারের এই ব্যর্থতার পেছনে প্রধান দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে শাসকদলেরই কিছু প্রভাবশালী নেতা-নেতৃত্ব, পুলিশ আধিকারিক এবং সরকারী অফিসারদের অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলন। কারণ এইসমস্ত বালি মাফিয়াদের কাছ থেকে মাসিক মোটা টাকা আর্থিক লেনদেন হয় এইসমস্ত প্রশাসনিক আধিকারিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বদের কাছে। ফলে নিজেদের আখের গোছাতে গিয়েই তারা দিনের পর দিন অবৈধ বালি পাচারে কারবার দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। ফলস্বরূপ বছরে মোটা টাকা সরকারী রাজস্বের ক্ষতি। তবে দেরীতে হলেও চলতি বছরে বালি তোলায় সরকারী নিষেধাজ্ঞা জারির পরও বালির রমরমা চোরা কারবারের খবর ছড়িয়ে পড়ায় নিজেদের পিঠ বাঁচাতে অবশেষে ময়দানে নেমেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। এখন দেখার তাদের এই অভিযান আদৌ সফল হয় কিনা।