নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ একেই বোধহয় বলে “গোঁদের ওপর বিষ ফোঁড়া”। একে শিল্পে মন্দার আঁচ তার ওপর দোসর বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি। আর এই দুইয়ের ক্রমাগত চাপে জেরবার দুর্গাপুর শিল্পতালুক। পরিস্থিতি এমনই যে, বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের পাহাড় জমলেও সেই পণ্য বাজারজাত করার উপায় নেই। যার অন্যতম কারণ দিনের পর দিন কমতে থাকা পণ্যের চাহিদা। আর এরই ফলস্বরূপ মুখ থুবড়ে পড়েছে শিল্পশহরের ২৫টিরও বেশি কলকারখানার দৈনন্দিন উৎপাদন। মন্দা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইতিমধ্যেই দুর্গাপুরের রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর, অন্ডাল, বামুনাড়া, সগরভাঙ্গা, কাঁকসা শিল্পতালুকের পাশাপাশি বাঁকুড়ার বড়জোড়া এলাকাতেও উৎপাদনের পরিমাণ এক ধাক্কায় অর্ধেকেরও নিচে নিয়ে আসা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে উৎপাদন সম্পূর্নভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। বেশ কিছু কারখানায় যেখানে প্রত্যেক দিন দিনে ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন চালু থাকত, সেই কারখানার ঠিকাশ্রমিকরা আজ কারখানা চত্বরে বসেই মাছি তাড়াচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই শিল্পের এহেন মন্দা বাজারের জেরে পুজোর আগেই সিদুরে মেঘ দেখছেন শিল্পশহরের কয়েক হাজার ঠিকা শ্রমিক। কারণ, আর দুমাসও বাকি নেই বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর। সারাবছর এই উৎসবের দিকেই চাতক পাখির মতো তাকিয়ে অপেক্ষা করেন বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিক ও তাদের পরিবার। কারণ, পুজোর মরসুমে বেতন আর সঙ্গে বোনাসের আশায় তারা বুক বাঁধেন। বোনাস পেলে পরিবারের কচিকাঁচাদের এবং অন্যান্য সদস্যদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়া, আনন্দে উৎসবে মেতে উঠতে চান ঠিকা শ্রমিকরা। কিন্তু পূজোর ঠিক কিছুদিন আগেই শিল্পে এহেন মন্দা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। শ্রমিকদের মনে এখন একটাই আতঙ্ক, বোনাস তো দূরের কথা পূজোর আগে কাজটা থাকবে তো? আর তাদের এই আশঙ্কা যে একেবারেই অমূলক নয় তার আঁচও ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। কারণ সম্প্রতি বেশ কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ লোকসান এড়াতে উৎপাদন যেমন বন্ধ করে দিয়েছেন তেমনি শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের পথেও হাঁটছেন তারা। ইতিমধ্যেই দুর্গাপুরের একাধিক কারখানা থেকে ৫০০রও বেশি ঠিকাশ্রমিককে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি আরও কিছু এরকম থাকলে সেই ছাটাইয়ের সংখ্যা যে আরও বাড়বে সেবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এহেন পরিস্থিতিতে একপ্রকার চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শিল্পাঞ্চলের ঠিকাশ্রমিকরা। কিন্তু কবে কাটবে শিল্পের এই মন্দা? এহেন নানান প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শ্রমিকদের মনের মধ্যে। কিন্তু কেউ জানে না শিল্পের এহেন মন্দার রেষ কতদিন চলবে। কী করেই বা এহেন মন্দার ক্ষতি কাটিয়ে ফের স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি। আপাতত প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সকলেই।