নিউজ ডেস্ক, দুর্গাপুরঃ দুর্গাপুরের সিটিসেন্টারে তিন তারা হোটেলে এক ব্যক্তির রহস্যমৃত্যু। মৃতের নাম রাজর্ষি চ্যাটার্জী (৪৫)। হোটেলে জমা পরিচয়পত্র অনুযায়ী ওই ব্যক্তি আসানসোলের বাসিন্দা। হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গেছে অনলাইনে বুকিংয়ের মাধ্যমে সোমবার রাজর্ষি চ্যাটার্জী ও তার সঙ্গে আসা ওই মহিলা পিয়ারলেস হোটেলের ২০৮ নম্বর রুমে চেক ইন করেন। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল, কিন্তু রুমে ঢোকার কিছুক্ষন পর সাড়ে ১০টা নাগাদ হোটেলের রিসেপশনে ফোন আসে রাজর্ষি চ্যাটার্জী নামে ওই ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করছেন। এরপর সঙ্গে সঙ্গে হোটেল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় হেলথ ওয়ার্ল্ড হাসপাতালে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকে। হোটেল ম্যানেজারের বয়ান থেকে জানা গেছে, হোটেল থেকে ওই ব্যক্তি বেরনোর সময় তিনি জীবিতই ছিলেন। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও ঘটনার সূত্রপাত এরপরেই। অসুস্থ ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরেই আশ্চর্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায় রহস্যজনক ওই মহিলা। রহস্যজনক মহিলা এই কারণেই, পরিচয়পত্রে উল্লেখ করা ওই মহিলা মৌমিতা কুন্ডুর পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বাড়ি দুর্গাপুরের ডিপিএল কলোনি এলাকায়। কিন্তু সোমবার এই ঘটনার পর ঠিকানা অনুযায়ী তার বাড়িতে গেলে দেখা যায় বাড়িটি ফাঁকা। আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে গত ৩-৪ মাস ধরে ওই বাড়িতে কেউ থাকেন না। স্বভাবতই ওই মহিলার পরিচয়পত্র ভুয়ো প্রমাণ হওয়ায় রহস্য আরও গভীর হয়েছে। শুধু মহিলার পরিচয়পত্রই নয় হোটেলে জমা করা মৃত রাজর্ষি চ্যাটার্জীর পরিচয়পত্রের ঠিকানা অনুযায়ী আসানসোলে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকেও এই নামের ওই এলাকায় কেউ থাকে না বলে জানানো হয়েছে। আর এই তথ্য সামনে আসতেই রহস্য দানা বেঁধেছে। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর পুলিশের তরফে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসকেরা ওই ব্যক্তিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে গোটা ঘটনায় সরাসরি আঙুল উঠেছে পিয়ারলেস ইন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। হোটেলের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও পুরুষ বা মহিলা হোটেলে রুম ভাড়া নিলে তার রুমে অন্য কোনও বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তি বা মহিলাকে রুমে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে হোটেলের ওয়েটিং রুমে বসে তারা কথা বলতে পারেন। কিন্তু এই ঘটনায় প্রমাণ হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনও নিয়মই মানেনি। প্রথমত, ওই ব্যক্তির সঙ্গে আসা রহস্যজনক ওই মহিলা তার স্ত্রী নন জেনেও হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের একই রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, হোটেলে চেক ইনের সময় দেওয়া পরিচয়পত্র যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও তাদের গাফিলতির তত্ব উঠে আসছে। যদিও এই ঘটনার পর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ উঠছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই নাকি পিয়ারলেস ইনে দেহব্যবসার একটা চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অভিযোগ, অনলাইনে রুম বুকিং করে প্রায় এইধরনের অসামাজিক কাজকর্ম বেড়েই চলেছে। যার উদাহরণ সোমবার এইধরনের ঘটনা। ঘটনার পর থেকে মৌমিতা কুন্ডু নামে ওই মহিলার এখনো কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ। কে এই মৌমিতা কুন্ড? হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গেছে ২০১১ সালে দুর্গাপুর সরকারী মহাবিদ্যালয়ে ইংরেজীর অধ্যাপক ছিলেন রাজর্ষি চ্যাটার্জী । এরপর তিনি বদলি হয়ে যান। বর্তমানে ওই মহিলা কোথায় থাকেন, কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত এই বিষয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ কিছুই বলতে পারেনি। স্বাভাবিকভাবেই সমগ্র ঘটনা এক ঘনীভূত রহস্য তৈরী করেছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এখনো ওই মহিলার কোনও খোঁজ পায়নি।