নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ বেআইনী হোর্ডিং ভাঙা, তবে ‘বিনা অনুমতিতে বসানো হোর্ডিং ছোঁওয়ায় যাবে না’ – এরকমই অদ্ভূত নীতিতে বৃহস্পতিবার সিটিসেন্টার চত্বর জুড়ে দায়সারা অপারেশন চালালো আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ)। এনিয়ে বিস্তর শোরগোল শহরজুড়ে, আর তার মাঝেই কলার উঁচিয়ে ময়দানে নামা আড্ডা’র আধিকারিকেরা বিবাদমান হোর্ডিং সংস্থার মালিকদের প্রায় মাছি তাড়ানোর মতো উড়িয়ে দিলেন ফুৎকারে। সরকারিভাবে আড্ডা’র আধিকারিকরা জানালেন, “দুর্গাপুর নগর নিগমের সাথে আলাদা করে বসে বাকি হোর্ডিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব”। রাজ্য সরকারের একটি সংস্থা যখন বেআইনী দখলদার উচ্ছেদ এবং বেআইনী হোর্ডিং হঠানোর সিদ্ধান্তে পথেই নামলেন, তখন এমন আধা-আধুরা কাজ কেন? বিতর্কের মুখে এডিডিএ’র টাউন প্ল্যানার অর্পণ চ্যাটার্জি বললেন-“ডিএমসির সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসা হবে। দরকার হলে প্রশাসনিক স্তরে ডিএমসিকে আমরা চিঠি দেব ‘ইউনিপোল’গুলির ব্যাপারে। তারপরই যা করার করা হবে।”
এই ইউনিপোল নিয়েই নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত। কিন্তু কি বস্তু এই ইউনিপোল? সোজা কথায় রাস্তার পাশে, বাস টার্মিনাসে বা বাজার এলাকায় পেল্লাই খাড়া লোহার খাম্বা আঁটানো থাকে। এরকম সাতটি ইউনিপোল যাকে বলে আচমকাই মাটি ফুঁড়ে গজিয়ে উঠেছে সিটিসেন্টার জুড়ে। যে জমিতে বিতর্কিত ওইসব খাম্বা বসানো হয়েছে, তার মালিক আসান্সল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা। বসানোর অনুমতি দিয়েছে দুর্গাপুর নগর নিগম। কোনও অনুমোদনই দেয়নি এডিডিএ। অর্থাৎ, যে জমির মালিক সে জানলই না, আর চাষ করে গেল অন্যজন! আর গত চারবছর ধরে ওই খাম্বাগুলি থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করে গেল একটি বেসরকারি সংস্থা।
তা সত্ত্বেও কিন্তু ঘুম ভাঙেনি আড্ডার। জোর করে “ঘুমন্ত” আড্ডাকে জাগাতে গিয়ে কপাল পুড়ল দুর্গাপুরের হোর্ডিং ব্যবসায়ীদের। যদিও তাদের একাংশ সরাসরি বেআইনী হোর্ডিং কারবারে যুক্ত বলে মেনে নিয়েছেন হোর্ডিং ব্যবসায়ীদের সংগঠনের শীর্ষকর্তারাও। গত শুক্রবার দুর্গাপুরের হোর্ডিং ব্যবসায়ীদের আচমকা তলব করে আড্ডা। ডাকা হয় নগর নিগমের অফিশিয়ালদেরও। সেই বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়- শহরের সমস্ত বেআইনী হোর্ডিং ভাঙা হবে আর তা শুরু হবে সিটিসেন্টার থেকেই।
বৈঠকের পরই ‘দুর্গাপুর আউটডোর অ্যাডভার্টাইজিং ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ গত বুধবার আড্ডার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক অরুন প্রসাদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বলে, সিটিসেন্টার জুড়ে আড্ডার অনুমোদন ছাড়াই ৭টি ইউনিপোল বসানো হয়েছে আর তা থেকে দেদার বেআইনী রোজগার চলছে রমরমিয়ে। ওই অভিযোগ পাওয়ার পরই অরুণ প্রসাদ তার অধঃস্তনদের বিষয়টিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু, বৃহস্পতিবার বেআইনী হোর্ডিং অভিযানে কার্যত দেখা গেল – আড্ডা’র বাহিনী সযত্নে এড়িয়েই গেলেন ইউনিপোলগুলি। অ্যাডভার্টাইজিং অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ গিরি, সভাপতি তপু দাসেরা গোটা বিষয়টিতে কার্যতঃ হতাশ। রবীন্দ্রনাথ বললেন, “বেআইনীভাবে আড্ডার জমিতে বসানো ইউনিপোল আমরা এডিডিএ’র নজরে আনলাম। তবে, ওনারা আমাদের হোর্ডিংগুলি গুঁড়িয়ে দিলেন, যেমন ছিল-তেমনই রইল ইউনিপোল।” কেন? জানতে চাইলে অর্পণ বাবু বললেন, “ডিএমসির সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”। আর রবীন্দ্রনাথ বাবুর আক্ষেপ, “বেনাচিতির এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ওগুলি বসিয়েছেন। শহরের দু-একজন নেতার হাত রয়েছে ওর মাথায়। তাই ‘অন্যরকম’ ব্যাপার বলে আমাদের ধারণা।” উল্লেখ্য, বেনাচিতি এলাকার হরেকৃষ্ণ রায় নামে এক ব্যবসায়ী নিছক নগর-নিগমের অনুমতি নিয়ে, এডিডিএ-কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে টানা চার বছর ধরে খাম্বায় বসে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। হোর্ডিং ভাঙার দিন দফায় দফায় চেষ্টা করেও হরেকৃষ্ণের খোঁজ মেলেনি।