সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া : ক্ষয়িষ্ণু সামন্ত্রতন্ত্রের অবসান ও নবীন ধনতন্ত্রেরউত্থানে মেতে উঠবে। বিশ্বায়নের বিশাল বৃত্তে থিম নির্ভর পুজো আজ দিকে দিকে। দর্শনার্থীদেরও বর্তমানে পছন্দ থিমের পুজো। তা বলে সাবেকিয়ানাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে একশো বছরের অধিক পুরোনো পুজো গুলি সাবেকিয়ানার ধারক ও বাহক। বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়ের ব্লকের হদলনারায়নপুর গ্রামে রামপুর বড় মন্ডল দেবোত্তর এস্টেটের পরিবারিক দূর্গা পুজা এবার তিনশো বছরে পদার্পণ করলো। প্রাচীনত্বের সঙ্গে নাবিনত্বের সার্থক মিলনক্ষেত্র রূপে এই পারিবারিক পুজো যথেষ্ট পরিচিত। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিষ্ণুপুর মল্ল রাজ গোপাল সিং এর আমলে (১৭১২- ১৭৪৮) মণ্ডল পরিবারের প্রতিষ্ঠা করেন মুচিরাম ঘোষ। সেখান থেকে মন্ডল পদবী লাভ। এই সনদ সৌভাগ্যকে স্মরণে রেখে নবজাত এক বংশধরের ‘সানন্দ’ নামকরণ করা হয়। এই বংশের বেচারাম মন্ডলের সময়কালে অট্টালিকা, দেব মন্দির ও রাসমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মাষ্টমীতে গঙ্গামাটি লেপনের মধ্য দিয়ে পূজার শুভসূচনা হয়।মণ্ডল পরিবারের দুর্গোৎসব বৈষ্ণব মতানুযায়ী হয়। পূজার চারদিন ধরে চলে নানান ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।পারিবারিক সৌহার্দ্য বর্ধনে, গৃহকর্তিদের রন্ধন ভার থেকে মুক্তি দিতে পুজোর সময় সমবেত ভোজনের আয়োজন করা হয়। নাটমন্দিরের বিলাসী ঝাড়বাতির রোশনাইয়ে আমেজে মৌতাতে মজে আবালবৃদ্ধাবনিতা। আসলে ক্ষয়িষ্ণু সামন্ত্রতন্ত্রের অবসান আর নবীন ধনতন্ত্রের উত্থানের দ্বান্দ্বিক মুহূর্তে জেগে থাকে সচেতন পরিবারের পারিবারিক দুর্গোৎসব। অর্থাৎ বৃহৎ বৃত্তের বাইরে থেকেও উৎসবের রঙে সেজে উঠে গ্রামবাংলার অন্নেষনে প্রতিবছরই নতুনত্বের ছোঁয়া দিয়ে যায় হদলনারায়নপুর গ্রামের বড়মন্ডল বংশের পারিবারিক দুর্গোৎসব।পাত্রসায়েরে এত ভালো পুজো আর হয়না। তাই এই পুজোকে কেন্দ্র করে আশেপাশের সকল গ্রামবাসি পুজোর পাঁচদিন মেতে ওঠেন।