নিজস্ব সংবাদদাতা, অন্ডাল :- ভাদু উৎসব নিয়ে মানভূম অঞ্চলে বেশ কিছু লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। পঞ্চকোট রাজপরিবারের নীলমণি সিংদেওর তৃতীয়া কন্যা ভদ্রাবতীর বিবাহ স্থির হওয়ার পর তাঁর ভাবী স্বামীর অকালমৃত্যু হলে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন, এই কাহিনী মানভূম অঞ্চলে সর্বাধিক প্রচারিত। বিয়ে করতে আসার সময় ভদ্রাবতীর হবু স্বামী ও তাঁর বরযাত্রী ডাকাতদলের হাতে খুন হলে ভদ্রাবতী চিতার আগুনে প্রাণ বিসর্জন করেন বলে কথিত আছে। ভদ্রাবতীকে জনমানসে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নীলমণি সিংদেও ভাদু গানের প্রচলন করেন। কিন্তু এই কাহিনীগুলি ঐতিহাসিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়।
বীরভূম জেলায় ভদ্রাবতীকে হেতমপুরের রাজার কন্যা হিসেবেও কল্পনা করা হয়েছে। এই জেলায় প্রচলিত রয়েছে যে, ভদ্রাবতীর সাথে বিবাহ স্থির হওয়ার পর ইলামবাজারের নিকটে অবস্থিত চৌপারির শালবনে ডাকাতদের আক্রমণে বর্ধমানের রাজপুত্রের মৃত্যু হলে ভদ্রাবতী তাঁর সাথে সহমরণে যান।
আরও পড়ুন: স্বপ্নাদেশের পর, জল ফুঁড়ে উঠে এলেন ‘দেবী’ মনসা, বিস্তর শোরগোল দুর্গাপুরে
পূর্বে ভাদুর কোন মূর্ত রূপ ছিল না। একটি পাত্রে ফুল রেখে বা গোবরের ওপর ধান ছড়িয়ে ভাদুর রূপ কল্পনা করে উৎসব পালন করা হত। পরবর্তীকালে বিভিন্ন রকমের মূর্তির প্রচলন হয়েছে। মূর্তিগুলি সাধারণতঃ হংস বা ময়ূর বাহিনী বা পদ্মের ওপর উপবিষ্টা মূর্তির গায়ের রঙ হলুদ, মাথায় মুকুট, হাতে পদ্মফুল, গলায় পদ্মের মালা ও হাতের তলায় আলপনা থাকে। কখনো মূর্তির কোলে কৃষ্ণ বা রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি থাকে।
ভাদু গীত লৌকিক সঙ্গীত হিসেবেই জনপ্রিয় হয়েছে। লিখিত সাহিত্য না হওয়ায় এই গান লোকমুখেই প্রচারিত হয়ে এসেছে। টুসু ও ঝুমুর গানের বিপরীতে ভাদু গানগুলিতে প্রেম এবং রাজনীতি সর্বোতভাবে বর্জিত। সাধারণতঃ গৃহনারীদের জীবনের কাহিনী এই গানগুলির মূল উপজীব্য।
এই হারিয়ে যাওয়া ভাদু গীতি ও ভাদু পুজোকে পুনরায় উজ্জীবিত করতে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছেন , উখ রা চ্যাটার্জি পাড়ার মহিলারা। পুজো সম্পর্কে ছন্দা মুখার্জি জানান,এই ভাদু পুজো তারা বিয়ের আগে থেকে করে আসছেন । আর প্রত্যেক বছরের ন্যায় ভাদু পুজোয় বাপের বাড়ি এসে তাদের পুরানো বন্ধু দের সাথে দেখা হওয়া ও তাদের আরও বেশি করে এই দিনে টেনে আনে। এই ভাদু পুজো দুই দিন ধরে তারা এক সাথে মিলিত হয়ে রাতভর ভাদু গেন মেতে থাকেন ।