নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- শিশুশ্রম বা শ্রমিক আজকের সমাজের একটি অভিশাপ। আমাদের সমাজে যে সময় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার কথা হাসতে খেলতে ছুটে বেড়ানোর কথা, সেই সময় পেটের জ্বালায় তারা কোন না কোন দোকানে কর্মরত হতে বাধ্য হন শুধুমাত্র দুবেলা দুমুঠো পেট ভরে খাওয়ার লোভেই। এই ছোট ছোট হাত আজ শ্রমিকের হাতে পরিণত হয়েছে এই লজ্জা সমস্ত সমাজের। আমাদের দুর্গাপুর এর থেকে আলাদা নয়, দুর্গাপুরে অনেক এমন জায়গা আছে যেখানে অনেক বাল শ্রমিকরা কাজ করেন পথে-ঘাটে। রাস্তার ধারে এমন অনেক দোকানপাট আমাদের নজরে আসে যেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কে দিয়ে কাজ করানো হয় বিশেষ করে মিষ্টির দোকান, মুদির দোকান ও বড় কাপড়ের দোকানেও পর্যন্ত এখন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা নিজেদেরকে শিক্ষিত সমাজের মানুষ বলে আমাদের নজর কখনো যায় না এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে দেখে। আমরাও হয়তো কখনো কখনো তাদেরকে দিয়ে শ্রম করিয়ে নিয়ে, কিন্তু একটা কথা আমরা ভুলে যাই যে আমাদের বাড়ির ছেলে মেয়েদের মতন তাদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে, তাদেরও পড়াশোনার করার অধিকার আছে তাদের ও খেলাধুলা করার সমান অধিকার আছে। শৈশবকে কেড়ে নেওয়ার কোন অধিকারই আমাদের নেই। কিন্তু তাও পেটের জ্বালাতে তাদের মা-বাবা তাদেরকে শ্রমিক রূপে বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে বাধ্য করেন। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের শিশু শ্রম বিভাগের অনেক রকম আধিকারিক আছেন যারা সবকিছু জেনে শুনেও চুপ করে থাকেন। কারণ তাদের কাছে এই বিষয়টি মাথাব্যথার কারণ নয়। শুধুমাত্র “উঠল বাই তো কটক যাই” মনোভাব নিয়ে কখনো কখনো তারা আচমকা একটা দুটো দোকানে অভিযান করে থাকেন। তেমনই এক অভিযান হল আজকে দুর্গাপুরে। সংশ্লিষ্ট শিশুশ্রম বিভাগের আধিকারিকরা নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মামড়া বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান চালান। এই অভিযান চালানোর সময় তারা হাতেনাতে দেখতে পান যে ছোটছোট হাত শ্রমিকের হাত হয়ে ওঠার রূপ। আধিকারিকরা নিজেরাও খুব ভালো করে জানেন যে এই অভিযানে খুব একটা ফল হবে না তাই তাদের মুখ থেকেও শোনা গেল যে শুধুমাত্র অভিযান চালিয়ে এই প্রথাকে রক্ষা করা যাবে না। শুধুমাত্র আইনী বন্দোবস্ত থাকলেই হবে না তার সাথে দরকার সাধারণ মানুষের চেতনা। আমরা যারা সাধারন মানুষ নিজেদেরকে সুষ্ঠু সমাজের অঙ্গ বলে মনে করি বা শিক্ষিত বলে মনে করি, তাদের উচিত যে কোন জায়গায় ছোট ছোট শ্রমিক দেখলে আমরা যেন তার বিরোধিতা করি। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে অনেক রকম আইন থাকলেও এখনও পর্যন্ত সেই রকম ভাবে কোন আইন প্রয়োগ করা হয় না। এই সমস্ত শিশুশ্রমিকদের যারা নিয়োগ করেছেন বা যেসব জায়গায় এইসব শিশু শ্রমিকরা কাজ করেন তাদের একটাই কথা যে পেটের জ্বালায় তাদের মা-বাবার, তাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকে তাদের কাছে দিয়ে যান কাজ করে, পেট ভরে দুবেলা খেতে পায় সেই রাস্তা করে দেওয়ার জন্য। শুধুমাত্র মানবিক দিক থেকেই তারা ওই ছোট ছোট শ্রমিকদেরকে কাজে নিয়োগ করতে বাধ্য হন। যাইহোক এতদিন পর শিশু শ্রম বিভাগের আধিকারিকদের শীত ঘুম থেকে যে তারা উঠেছেন তার প্রমাণ পাওয়া গেল। ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযান আরও জোরদার চলবে এই আশা রাখেন নগরবাসী।