সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ- বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে ঘরের মূল দরজা। বাজছে সানাই। নাচের তালে যাওয়া হচ্ছে জল সইতে। হ্যাঁ, একদমই ঠিক ধরেছেন! এটি একটি অনুষ্ঠান বাড়ি। আজ ইসানের অন্নপ্রাশন। ঈশান আজ প্রথমবার মুখে ভাত তুলে নেবে।শুনে মনে হতেই পারে,এ আবার নতুন কি? এটা তো সব শিশুর ই হয়! কিন্তু এই অন্নপ্রাশন বাড়ি একটু অন্যরকম। একদিকে চলছে অন্নপ্রাশনের রীতিনীতি পালন। তেমনি অন্য পাশে প্যান্ডেল করে চলছে রক্তদান শিবির। রক্তদান মহৎ দান সবাই বলে। কিন্তু ক’জন ই নিজের আনন্দের সময় এই মহৎ উদ্দেশ্য কে মনে রাখে।অনুষ্ঠান বাড়ি মানে খাওয়া-দাওয়া, নাচ-গান এটাই যাদের কাছে সব নয় তারাই ব্যতিক্রমী। ব্যতিক্রমী ঈশানের বাবা মা। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় এর ইন্দ্রজিৎ এবং রাখি সুর দম্পতি।ব্যতিক্রম দাদুর অসিত সুর ও। দাদু এই অন্নপ্রাশন সহ রক্তদান শিবিরের মূল উদ্যোক্তা। বেঙ্গল কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষজন হন্যে হয়ে ছুটে আসে তার কাছে রক্তের জোগাড় করতে। কিন্তু তার কি ক্ষমতা রক্ত জোগাড় করে দেবেন। তাই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় রোগীর আত্মীয়দের। আর সেথান থেকেই মাথায় আছে বিষয়টা। অন্নপ্রাশন ভুরিভোজ নাচ-গান খাওয়া-দাওয়া অনেকেই করেন। কিন্তু যদি অন্নপ্রাশনের পাশাপাশি একটি রক্তদান শিবির করা যায়। আর যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। ছেলে ইন্দজিৎ জম্মু-কাশ্মীরের সিআরপিএফ কর্মরতা। রক্ত একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি ও দেখেছেন অনেক সময় রক্তের অভাবে তার সঙ্গী সাথীদের বুলেটে ঝাঁজরা শরীর নিথর হয়ে পড়তে। এক কথায় রাজি হয়ে যান বাবার মহতী প্রস্তাবে। অন্নপ্রাশনে আসার নেমন্তন্ন কার্ডের রক্তদান করতে হবে একথা জানিয়ে দেওয়া হয় আত্মীয়-পরিজনদের। সেইমতো ২৫ জন আমন্ত্রিত আত্মীয় থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকজন আজ রক্তদান করলেন। রক্তদান, খাওয়া-দাওয়া ভুরিভোজ আনন্দ সবে মিলে এক সামাজিক বার্তা সঙ্গে অন্নপ্রাশন শেষ হল।এই রক্ত যখন কোন মুমূর্ষু রোগীকে দান করা হবে সেই রোগীর পরিবার-পরিজনদের আশীর্বাদী এই শিশুর জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে এমনই ভাবনা ঈশানের দাদুর। তিনি চাইছেন তার দেখাদেখি এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে আসুক আরো অনেকে। বাঁচবে মানুষ বাঁচবে পরিবার।
অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানের মধ্যেই আয়োজন করা হল রক্তদান শিবিরের
RELATED ARTICLES