সংবাদদাতা, পানাগড়ঃ- গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে পানাগড়ের সব থেকে বড় উৎসব, পাহাড়ি শাহ ওরফে দান বাবার ঊরস উৎসব। এই উৎসব কে ঘিরে স্থানীয়রা অপেক্ষায় থাকেন সারা বছর। সর্ব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি এই উৎসবে সম্প্রীতির বার্তা বহন করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। জানা যায় এই মেলার সূচনা হয় ১৯৬২ সালে। জনশ্রুতি আছে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে কয়েকজন ফকির ঈশ্বরের বাণী প্রচারে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেন। ঈশ্বরের বাণী প্রচারের পাশাপাশি চিন্তাগ্রস্থ মানুষদের সঠিক পথের দিশা বলে দিতেন। এমনই একজন হলেন পাহাড়ি শাহ ওরফে দান বাবা। শোনা যায় তিনি মানুষ কে দান করতেন যার কারনে তার নাম হয় দান বাবা। বর্তমানে যেখানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই স্থানেই তিনি বাস করতেন। এবং এলাকায় ঘুরে ঘুরে ঈশ্বরের বাণী প্রচার করে বেড়াতেন। মানুষ তার কাছে গেলে তিনি মানুষের কষ্ট নিবারণের জন্য সঠিক পথ বলে দিতেন। পরে তিনি দেহ রাখলে তার কথা মত এলাকার মানুষ তাকে সেই জায়গায় তার সমাধি তৈরি করে দেন। পরে তার সমাধিস্থলে এলাকার মানুষ তাদের দুঃখ কষ্টের কথা জানাতেন। শোনা যায় এমনি জনৈক এক ব্যাক্তি দুরারোগ্য ব্যাধিতে কষ্ট পেয়ে দানবাবার কাছে জানাতে পরে তিনি স্বপ্না দেশ পেয়ে সেই মত সমাধিস্থলে গিয়ে সেখানকার মাটি ও ধূপের চাই মেখে তার ব্যাধি সেরে যায়। এছাড়াও এলাকার জনৈক এক ব্যাক্তি চাকরি পাবার আশায় ঘুরে ঘুরে অবশেষে দান বাবার কাছে তার কষ্টের কথা জানালে কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি চাকরি পান। পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে দানবাবা কে সুগন্ধি ধুপ, গোলাপ জল, নকুল দানা, ও নতুন চাদর তার সমাধিস্থলে চাপিয়ে আসেন। এমনই অনেক অলৌকিক ঘটনার কথা ধীরে ধীরে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ক্রমশই মানুষের ভিড় জমতে থাকে আস্থা ও বিশ্বাসের উপর ভর করেই। পরে ধীরে ধীরে সেখানে একটি দুটি করে দোকান বসতে থাকে। স্থানীয়রা স্থির করেন বছরের একটি দিন ওই স্থানে মেলা বসাবেন। সেই থেকে ধীরে ধীরে ওই জায়গায় মেলার সূচনা হয়। প্রায় ৬২ বছর ধরে ক্রমেই সেই মেলার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। এলাকার মানুষ মনে করেন তিনি আজও জীবিত আছেন তাই রোজ নিয়ম করে তাকে নকুল দানা ও গোলাপ জল দেওয়া হয়। এমনই একজন ছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানীগঞ্জের দাতা বাবা ও বীরভূমের পাথর চাপরির বাবা। প্রথমে রানীগঞ্জ পরে দানবাবা শেষে পাথর চাপরি পর পর তিন জনের ঊরস উৎসব হয়ে আসছে নিয়ম করেই। প্রতি বছরের মত মার্চ মাসের ৯ তারিখ থেকে শুরু করে ১৬ তারিখ পর্যন্ত মেলা চলে দান বাবার। প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ ভিড় জমান এই মেলায়। স্থানীয়রা তো বটেই দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন এই মেলা দেখতে। আস্থা ও বিশ্বাসের উপর ভর করে আজও তাই মেলার জনপ্রিয়তা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।