জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতাঃ- ২০২১ সালের ২ রা জুন বিশিষ্ট অভিনেত্রী পিয়ালী বসুর হাত ধরে পথ চলা শুরু হয়েছিল। চলার পথে পাশে পেয়েছিলেন বেশ কয়েকজনকে। তারপর গত এক বছর ধরে সেবার জগতে বিশেষ ছাপ ফেলে কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা ‘হেল্পিং হ্যাণ্ডস’। শিল্পী সুলভ ‘ইগো’ ঝেড়ে ফেলে সাহায্যের ডালি নিয়ে পৌঁছে গ্যাছে কখনো সুন্দরবনে, কখনো বা অযোধ্যা পাহাড়ের দুস্থদের পাশে। একবছর পূর্তি উপলক্ষ্যে লক্ষ্য ছিল একটু অন্যরকম কিছু করে দেখানোর। এর জন্য এবার তারা বেছে নেয় বেহালার ‘ব্লাইণ্ড স্কুল’-কে।
সরকার অধিগৃহীত এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে ১৮৯৪ সালে। এখানে ৯০ জন আবাসিক শিশু-কিশোর থাকে। এদের কেউ সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তিহীন, কারো কাছে পৃথিবীটা আবছা। চারদেওয়ালের বাইরের জগতটা এদের কাছে বড্ড অপরিচিত। গত ৩১ শে জুলাই এদের পাশে এসে দাঁড়ায় ‘হেল্পিং হ্যাণ্ডস’।
পরিকল্পনাটা আগেই ঠিক করা ছিল।পরিকল্পনামাফিক ওখানে পৌঁছে যায় সংস্হার সদস্যরা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক সহ প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মীরা। সবার সহযোগিতায় পিকনিকের স্টাইলে ৯০ জন শিশু-কিশোর সহ ১০০ জনের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। শুধু তাই নয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্হার সদস্যরা নিজেদের পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও ওদের সঙ্গে কিছুটা সময় ধরে আনন্দে মেতে ওঠে। নিজেদের একঘেয়ে আলো-অন্ধকার জীবনে শিল্পী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের পেয়ে আবাসিকরাও খুব খুশি।
পিয়ালী বসু ছাড়াও ‘হেল্পিং হ্যাণ্ডস’ এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মৌমি, মৌসুমী, সোমদত্তা, দেবী, বনশ্রী প্রমুখ। বিশেষভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে লিজা গোস্বামী, সুদীপ্ত ঘোষ ও গৌতম পুরকায়স্হ।
‘হেল্পিং হ্যাণ্ডস’ এর সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক শেরু বাল্মিকী বললেন – সত্যিই আজ আমাদের আনন্দের দিন। আবাসিকরা একদিনের জন্যে হলেও বাইরের জগতের মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেল। এখানে আমরা যারা সর্বদা ওদের পাশে থাকি তাদের বাইরে যখন অন্যরা আসেন তখন ওদের মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
গত একবছর ধরে যাদের সক্রিয় ও আন্তরিক সহযোগিতায় ‘হেল্পিং হ্যাণ্ডস’ বারবার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে তাদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পিয়ালী দেবী বললেন – এরা না থাকলে কখনোই মানুষের পাশে থাকতে পারতাম না। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু-কিশোরদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে সত্যিই খুব ভাল লাগছে। একইসঙ্গে এই ফুটফুটে বাচ্চাদের দেখে কষ্টও হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে সদস্যদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে ভবিষ্যতে এখানে আবার আসার ব্যাপারে তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত ‘হেল্পিং হ্যাণ্ডস’ হলো পিয়ালী দেবীর মানসকন্যা।