বিশেষ সংবাদদাতা, আসানসোল: তার মন্ত্রী হওয়ার জল্পনায় মঙ্গলবার নিজেই জল ঢেলে পুরভোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেন বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়। তিনি আবার আসানসোল নগর নিগমের মেয়র হিসেবে কাজ চালিয়ে আসছেন বিগত কয়েক মাস ধরে।
তিনি পুরভোটে লড়েননি। তবু আসানসোল পুরসভার মেয়র হিসাবে বিধান উপাধ্যায়ের নামই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিয়ম অনুযায়ী – পদে বহাল থাকতে গেলে নির্দিষ্ট ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে হবে তাকে। সেই অনুযায়ী ২১ অগস্ট আসানসোল পুরনিগমের উপনির্বাচনেরই প্রার্থী হলেন বিধান। মঙ্গলবার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে আসানসোলের মহকুমা শাসকের অফিসে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন তিনি। স্থানীয় রবীন্দ্র ভবনের সামনে থেকে মিছিল করে মহকুমা শাসকের দফতরে পৌঁছে মনোনয়নপত্র দাখিল করে বিধান জানান, জেতার ব্যাপারে তিনি একশো শতাংশই আশাবাদী। গত পুরভোটে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। তবে কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই, ওই আসনেই ফের ভোট হচ্ছে। “আসলে পাকাপোক্ত ভাবে বিধানকেই মেয়রের পদে বসানোর জন্য তৃনমূল কংগ্রেস কৌশল করে সঞ্জয়কে পদত্যাগ করিয়েছে,” দাবি বিজেপির।
এদিকে, গতকালই পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাধিপতির পদ থেকে বিধানকে সরিয়েছে দল। এদিকে, দলের রাজ্য কমিটি তথা খোদ পার্টি সুপ্রিমো বুধবারই রাজ্য মন্ত্রীসভায় চার পাঁচটি নতুন তরতাজা মুখ নিয়ে আসার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তারপরপরই জেলা সভাধিপতির পদ থেকে বিধানকে আচমকা সরানোয় বারাবনির বিধায়কের মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আসানসোল দুর্গাপুরে জোর জল্পনা ছড়ায়। এমনকি, বিধানকে মন্ত্রী করতে হলে পাশেরই আসানসোল (উত্তর) কেন্দ্রের বিধায়ক বর্ষীয়ান মলয় ঘটককে মন্ত্রীত্ব থেকে সরানো হতে পারে বলেও জল্পনা আরো ডালপালা বিস্তার করে। তার সম্ভাব্য মন্ত্রীত্বের প্রসঙ্গে এদিন মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর বিধানের ক্ষুদ্রতম প্রতিক্রিয়া, “উড়োকথায় কান দিতে নেই।” এরপরই ইঙ্গিত করে তিনি বোঝান, “তাহলে এটা কি করছি এখন ?” আসলে, দলের যুবনেতা অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃনমূল কংগ্রেস এখন থেকে জোরালো ভাবে – এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি অনুসরণ করতে চাইছে। বিধান পাকাপাকিভাবে মেয়র পদে বহাল থাকতে গেলে, তার আর দলের সভাধিপতির পদে থাকা চলবে না।
এদিকে, তৃনমূল কংগ্রেসের জেলা সভাধিপতির পদ থেকে বিধানকে সরানোর অনেক আগে থেকেই ওই পদে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন চক্রবর্তীকে বসানোর কথা দলের অন্দর মহল থেকে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপির মোকাবিলায় তার মতো দামাল নেতারই এখন এ জেলায় প্রয়োজন বলে তৃনমূল কংগ্রেসের যুব মহলের দাবি। এ বিষয়ে মঙ্গলবার নরেন নিজে অবশ্য বলেন, “এরকম কোনো কথা আমার জানা নেই। দলও কিছু বলেনি।” এদিকে, তৃনমূল কংগ্রেসেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্গাপুর (পূর্ব)’র বিধায়ক প্রদীপ মজুমদারকেই এবার কৃষি মন্ত্রী হিসেবে রাজ্য মন্ত্রী সভায় নিয়ে আসতে চলেছে তৃনমূল কংগ্রেস। যদিও, ২০১৬ সালেই তাকে মন্ত্রী সভায় নিয়ে আসার কথা নিজের মুখেই ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেবার অবশ্য দুর্গাপুরে দলের আভ্যন্তরীণ দলাদলির প্যাঁচে পড়ে পরাজিত হতে হয়েছিল প্রদীপ মজুমদারকে।