জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দমদমঃ- পেশার সূত্রে যে দপ্তরের সঙ্গে উত্তর দমদমের বাগুইহাটির স্মৃতিরূপা হাজরা যুক্ত তাতে ইচ্ছে করলেই তিনি নিজের জন্মদিন অফিসের সহকর্মী ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে চারদেওয়ালের মাঝে উৎসবের মেজাজে পালন করতেই পারতেন। সেখানে থাকত মৃদু বাজনার তালে মায়াবী আলোর ঝলকানি, বাড়িতে থাকত রঙিন ঝলমলে পোশাক পরিহিত আত্মীয় স্বজনের ভিড়, নিজের পেশার জগতের মানুষের উজ্জ্বল উপস্থিতি, টেবিল ভরে যেত দামি দামি উপহারে, কেক কাটার সময় ঝলসে উঠত ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বাল্ব – সব মিলিয়ে সৃষ্টি হতো এক স্বপ্নময় পরিবেশের এবং সেটাই হতো স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ তিনি নিজের জন্মদিন পালন করলেন উত্তর দমদমের শরৎ বসু রোডের শরৎ কলোনির ‘আদরবাসা’-র একঝাঁক আদরের ফুটফুটে অসহায় শিশুদের সঙ্গে।
১৯ শে আগষ্ট ছিল স্মৃতিরূপার জন্মদিন। মা-আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে দুপুর নাগাদ চলে আসেন ‘আদরবাসা’-র আদরের বাসায়। সঙ্গে নিয়ে এসেছিল বড় কেক, প্রচুর খাবার ও অফুরন্ত ভালোবাসা। তারপর সে মেতে ওঠে আদরবাসার ক্ষুদেদের সঙ্গে। তাদের উপস্থিতিতে সে জন্মদিনের কেক কাটে। তারপর সেগুলি একে একে তুলে দেয় সেখানে উপস্থিত শিশুদের হাতে। শুধু তাই নয় তাদের হাতে খাবারের প্যাকেটও তুলে দেয়। দামি পার্থিব উপহার না পেলেও বিনিময়ে সে পেল ঐসব অসহায় শিশুদের অকৃত্রিম হাসি ও বুকভরা ভালবাসা। একইসঙ্গে এখানে আবার আসার জন্য আন্তরিক আমন্ত্রণ।
প্রসঙ্গত ‘আদরবাসা’ হলো দমদম নিবাসী অর্পিতা ইন্দ্রের মানসকন্যা। নিজের সামান্য আয়কে সম্বল করে বারবার সে এলাকার দুঃস্থ শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছে। লকডাউনের সময় হাতে তুলে দিয়েছে খাবার, পুজোর সময় জামাকাপড়। করোনা জনিত কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিশুদের জন্য নিজের বাড়িতে শুধু পাঠশালা তৈরি করেনি তাদের হাতে টিফিনও তুলে দিচ্ছে । যদিও তার নিঃস্বার্থ ‘হার্ট টাচিং’ কাজে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন পাশে দাঁড়ালেন স্মৃতিরূপা ।
আদরবাসার শিশুদের সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিরূপাকে একরাশ শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়ে অর্পিতা দেবী বললেন – আজ আমি সত্যিই অভিভূত, স্মৃতিরূপার কাছে কৃতজ্ঞ। ওর জন্য আমার আদরের শিশুরা একদিনের জন্যে হলেও যেভাবে আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ পেল সেটা ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নাই। তার আশা আগামী দিনে স্মৃতিরূপাদের মত আরও অনেকেই এখানে আসবে এই অসহায় শিশুদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করতে।
অর্পিতার ভূয়সী প্রশংসা করে স্মৃতিরূপা বললেন, ‘বর্তমান যুগে অর্পিতাদির মত নিঃস্বার্থ ভাবে সেবা করে যাওয়া মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর। আমার সৌভাগ্য আমি তাকে খুঁজে পেয়েছি। একঝাঁক শিশুর সঙ্গে জন্মদিন পালন করে যে আনন্দ পেলাম সেটা যেকোনো দামি উপহারের থেকে অনেক বেশি মূল্যবান। তিনি আরও বললেন – শুধু জন্মদিনে নয়, আমি আবার এখানে আসব।’ প্রসঙ্গত ব্যক্তিগত ভাবে স্মৃতিরূপা শিশুদের খুবই ভালবাসে।