eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্গাপুর নগর নিগমকে কি 'থুতু চাঁটিয়ে' ই ছাড়লেন সিটি সেন্টারের ঘোষাল ?

দুর্গাপুর নগর নিগমকে কি ‘থুতু চাঁটিয়ে’ ই ছাড়লেন সিটি সেন্টারের ঘোষাল ?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- শেষ পর্যন্ত নগর নিগমকে ফেলা ‘থুতু চাঁটিয়ে’ই ছাড়লেন সিটি সেন্টারের আশোক ঘোষাল। তিনি যে দারুন ‘প্রভাবশালী’! নগর নিগমেরই জারি করা বারংবারের নিষেধাজ্ঞাকে ‘জল’ করে দিয়ে ঘোষাল এবার শুরুই করে দিলেন বাড়ির তেতলা’র নির্মাণ কাজ।

ইটের ওপর ইট সাজিয়ে খেয়াল মতো দেওয়াল তুলতে গিয়ে এই ঘোষালই প্রথম থমকে যান ২০১৫ তে। কিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকার পর ফের নির্মাণ শুরু করতেই নগর নিগমের কড়া বাধার মুখে পড়ে যাকে বলে সেঁটে গেছিলেন ঘোষাল। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত এবং তার জেরে নগর নিগমের কমিশনারের কড়া হুশিয়ারি। নগর নিগমের মেয়র তখন অপূর্ব মুখার্জী। তিনি ছিলেন সিটিসেন্টারের ২২নং ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত। অপূর্বর জায়গায় ২০১৭ তে এলেন তার স্ত্রী অনিন্দিতা মুখার্জি। ডেপুটি মেয়রের পদ থেকে মেয়রের আসনে বসেছেন আটমাস। তার আমলেই ঘোষাল-কাণ্ডে ৭ বছর পর পিছু হঠতে হল নগর নিগমকে। শুধু ঢোঁক গেলাই নয়, মেয়র অনিন্দিতা ঘোষালের ‘আব্দার’ মেনে অজ্ঞাত কারণে ঘোষালের জরিমানাও নাকি কমিয়ে দিলেন ৫০ শতাংশেরও বেশি, বলে অভিযোগ এলাকায়। এতে দারুন শোরগোল নগর নিগমে। কেন পিছু হঠল নিগম ? পিছপা’ই যদি হোল, তবে জরিমানা লঘু করা হল কোন স্বার্থে ? নিগমের একশ্রেণীর কর্মীর মতে, ”উনি মেয়রের কাছের লোক। সম্ভবতঃ সেই কারনেই সরকারি রাজস্বের বিষয়টা অতটা গুরুত্ত পায়নি।” যদিও দুর্গাপুর নগর নিগমের এক আধিকারিক সূত্রে জানা গেছে “নগর নিগমের পুর আইন মোতাবেক যে ফাইন ধার্য করা হয়েছিল সেই ফাইনই নেওয়া হয়েছে ঘোষালের কাছ থেকে। অশোক ঘোষাল মেয়রের কাছে অনুরোধ করেছিলেন ফাইন কমানোর জন্য ঠিক। তবে মেয়র নগর নিগমের ধার্য করা রেগুলারাইজেশন আইন মোতাবিক ফাইনের পক্ষেই সায় দেন এবং শেষ অবধি তাই করা হয়েছে। আমরা ৩৪০০০ টাকা ফাইন নিয়েছি।”

অশোক ঘোষালের প্রতিবেশীদেরও দাবি, ”ওনার সাথে বাম আমলের মতোই , এই আমলেও ওপর মহলের দারুন যোগাযোগ। ওনার ছেলেও শুনেছি যথেষ্ট প্রভাবশালী।”

দুর্গাপুর নগর নিগমের কার্য্যনির্বাহী বাস্তুকার সুজয় ব্যানার্জী জানালেন, ”সদ্যই অশোক ঘোষালের ফাইলটা ছাড়া হয়েছে। আমরা যে ফাইন ধার্য্য করেছিলাম, তা কমানোর জন্য মেয়রের কাছে আবেদন করেছিলেন উনি, এটুকু জানি।”

সিটিসেন্টারের নন্ কোম্পানি পাড়ার সুনীতি চ্যাটার্জি পথের একটি কর্নার প্লটে বিতর্কিত ‘ঘোষালবাড়ী’। সেই বাড়িকেই প্রাসাদের চেহারা দিতে ঘোষালের এখন ব্যস্ততা। প্রতিবেশীদের বক্তব্য , ”অনেক বাধা ছিল। তবে, মেয়রকে ধরে নিজের ব্যবস্থাটা তো তিনি করেই নিলেন নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে।” সম্ভবতঃ সে কারণেই ‘ঘোষালবাড়ী’র দেওয়াল উঠছে এখন তরতর করে।

২০১৫’র ১০ই ডিসেম্বর দুর্গাপুর নগর নিগমের কমিশনার আশোক ঘোষালকে বেআইনি নির্মাণ বন্ধের প্রথম নোটিশটি পাঠান। তাতে কমিশনার উল্লেখ করেন, ”আপনার বাড়ীর তৃতীয় তল নির্মাণের জন্য আপনি দ্বিতীয় তলের কলাম ও বিম ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছেন নগর নিগমের অনুমোদন না নিয়ে। এটি ২০০৬’র পশ্চিমবঙ্গ পুরনিগম আইনের ২৬৬নং ধারার পরিপন্থী। তাই, আপনাকে অবিলম্বে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।” বিষয়টিতে নজর রাখার জন্য দুর্গাপুর পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এবং সিটিসেন্টার পুলিশ ফাঁড়ির আধিকারিককেও সূচিত করেন পুর কমিশনার। এতে সাময়িক থমকে যান ঘোষাল। অল্পদিনেই ফের নির্মাণ কাজ শুরু করে দেন তিনি।

তার বাড়ীতে বেআইনি নির্মাণ কেন ভাঙ্গা হবেনা- জানতে চেয়ে ঘোষালকে ২০১৬’র ১২ই ফেব্রুয়ারি ফের নোটিশ করেন কমিশনার। কমিশনার উল্লেখ করেন, ”আমাদের বিল্ডিং প্ল্যান বিভাগ জানাচ্ছে আপনি নির্মাণ বন্ধের বিজ্ঞপ্তিকে অগ্রাহ্য করে একটি অংশের নির্মাণ কাজ সেরে ফেলেছেন। যার জন্য আপনি নগর নিগমের কোনো আনুমদনেরই তোয়াক্কা করেননি। যা ২০০৬’র পুর আইনের পরিপন্থী।” কার্যতঃ নির্মাণ ভাঙ্গার নোটিশে ফের অস্বস্তিতে পড়ে কাজ বন্ধই করে দেন ঘোষাল।

সেই অসমাপ্ত কাজই এবার জর কদমে শেষ করতে লেগে পড়েছেন আশোক ঘোষাল। তবে, এবার আর গায়ের জোরে নয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ”হ্যাঁ। আমি কাজ শুরু করেছি। পুরসভার অনুমোদনও পেয়েছি।” জরিমানার অঙ্কের প্রশ্নে তার ঝাঁঝালো জবাব এল ইংরেজিতে ”দ্যাট ইজ নট ইয়োর লুক আউট। ওকে ?” ঘোষাল আবার স্থানীয় নন কম্পানি রেসিডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনে’র সহ-সভাপতি বলে জানা গেছে।

তার বারংবার বেআইনি নির্মাণ, তাকে ঘিরে বারে বারে বিজ্ঞপ্তি এবং পরিশেষে জরিমানা মুকুব, -প্রসঙ্গে নগর নিগমের মেয়র অনিন্দিতা মুখার্জি বললেন, ”বেআইনি নির্মাণ সে যেই করুক তা বরদাস্ত করিনা আমরা। ওনার নির্মাণে বা কোনো পদ্ধতি নিয়ে যদি অভিযোগ আসে আমাদের কাছে, তার তদন্ত হবে। প্রয়োজনে বেআইনি নির্মাণ ভেঙ্গে দেওয়া হবে।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments