জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- ওদের হাতে তৈরি ছেলেমেয়েদের কেউ ডাক্তার, কেউবা বৈজ্ঞানিক বা ইঞ্জিনিয়ার। অনেকেই তাদের মতনই মানুষ গড়ার কারিগর অর্থাৎ শিক্ষক হয়েছেন। কেউ আবার অন্য কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত।অনেক দিন আগে কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেও যাদের দেখলে এখনো শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভয়ে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের হাত-পা কাঁপে। বর্তমান প্রজন্ম হয়তো তাদের চেনেনা। কিন্তু এখনো ভোলেনি তাদের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী তথা গুসকরা পুরসভার কাউন্সিলররা যারা প্রকৃত শিক্ষাটা ওদের কাছ থেকেই লাভ করেছে। ওদের একমাত্র পরিচয় ওরা গুসকরা পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
গত ৫ ই সেপ্টেম্বর ছিল শিক্ষক দিবস। অনেক দিন আগে কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়ে বয়স জনিত কারণে কেউ হয়তো চারদেওয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে অতীতের ‘শিক্ষক দিবস’-এর স্মৃতিচারণ করতে ব্যস্ত। কেউ হয়তো সেই ক্ষমতাটাও হারিয়ে ফেলেছেন। ঠিক তখনই বাড়িতে পৌঁছে যায় গুসকরা পুরসভার আমন্ত্রণ পত্র- শিক্ষক জীবনে উনাদের অবদানের জন্য পুরসভার পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হবে।
আবার সবার সঙ্গে দ্যাখা হবে- এই ভাবনায় মুহূর্তের মধ্যে সবার মন আনন্দে ভরে গ্যালো। প্রত্যেকেই ফিরে পেলেন তাদের অতীতকে। আমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় একশ জন। মোটামুটি আশি জন উপস্থিত হলেন পৌরসভার সামনে। যেন সত্যিকারের চাঁদের হাট। আজও তাদের সামনে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে ডাকসাইটের রাজনৈতিক নেতারা। যাদের সামনে ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সাধারণ মানুষ তারাই কিনা দাঁড়িয়ে একদল বৃদ্ধের সামনে। এক অপূর্ব দৃশ্য! পুরসভার পক্ষ থেকে একে একে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হলো ফুলের তোড়া সহ অন্যান্য যৎকিঞ্চিত উপহার সামগ্রী। যারা আসতে পারেননি তাদের বাড়িতে পৌঁছে যায় কাউন্সিলাররা। ছাত্রদের জন্য গর্ববোধ করেন তারা।
উপস্থিত ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান সহ প্রত্যেক কাউন্সিলার, স্হানীয় বিধায়ক এবং বহু সাধারণ মানুষ।
উপস্থিত ও অনুপস্থিত প্রত্যেক শিক্ষক শিক্ষিকার প্রতি সম্মান জানিয়ে গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী বললেন – যেটুকু শিক্ষালাভ করেছি সবটাই এদের কাছে। আইনবলে আমি গুসকরার প্রশাসনিক প্রধান ঠিকই, কিন্তু সবার উর্দ্ধে শিক্ষক সমাজ, মানুষ গড়ার কারিগররা। আজও সামনাসামনি দ্যাখা হলে ভয় লাগে – কোনো ভুলের জন্য ছাত্র জীবনের মত সবার সামনে বকে দেবেন নাতো! চলার পথে এদের অবদান কোনোদিনই ভুলতে পারবনা। শিক্ষক দিবসের দিন এদের সম্মান জানানোর সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত।