সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী),বহরমপুরঃ- জগজ্জনননী মা সারদা ছিলেন অন্তর্যামী। তিনি মনের সব কথা পড়তে পারতেন। আবার তিনি যখন সকলের সঙ্গে থাকতেন তখন তিনি যেন গ্রাম্য এক বধূ- নিজের ঐশ্বর্য তিনি খুব লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতেন। তবে মায়ের সন্তানেরা মাঝে মাঝে তার ঐশ্বর্যের কথা জানতে পারতো। তেমনই একটি কথা বলবো আজকে।
গৌরীশ্বরানন্দজী মহারাজ মায়ের সম্পর্কে বলেছেন, “মায়ের লজ্জাশীলতা ছিল অসাধারণ। মা স্বামীজী মহারাজ, শরৎ মহারাজ, মহাপুরুষ মহারাজ, প্রভৃতি সকলকেই ‘ছেলে’ বলতেন, কিন্তু তাঁদের সামনে ঘোমটা দিতেন আর ঘোমটার ভিতর থেকে আস্তে আস্তে কথা বলতেন। অনেক সময় যোগীন-মা বা গোলাপ-মা আবার সেটা জোরে বলে দিতেন। শরৎ মহারাজ মাকে প্রণাম করে বারান্দায় এসে অনুযোগের সুরে বলতেন ‘আমি যেন শ্বশুর !” বয়সের তুলনায় বেঁটে ছিলাম বলে আমাকে আরও ছোট মনে হত। এই কারণে মা আমার সামনে আর ঘোমটা দিতেন না। এইজন্যই মাকে ভাল করে দেখবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এছাড়া মায়ের পায়ে বাত ছিল এবং আমার সৌভাগ্য হয়েছিল মায়ের পায়ে বাতের তেল মালিশ করে দেবার। এই মালিশ করবার সময় দেখেছি মায়ের পায়ের তলা অদ্ভুতরকম কোমল এবং হাল্কা গোলাপী রঙের অথচ মা কামারপুকুর বা জয়রামবাটী থেকে দক্ষিণেশ্বরে এবং দক্ষিণেশ্বর থেকে কামারপুকুর-জয়রামবাটী হেঁটেই যেতেন। আর জীবনে কখনও জুতা বা চটি পরতেন না। একদিন তেল মালিশ করার সময় আমার মনে হল মায়ের পায়ের বাত যদি আমার পায়ে আসে তো মা ভাল থাকেন, তবে খুব আনন্দ হবে। এই ভেবে মায়ের পায়ে হাত রেখে আমার ঐ হাতের কনুইটি আমার পায়ের হাঁটুতে ঠেকাতেই মা আমার দাড়িতে চুমো খেয়ে বললেন : “ছিঃ, ছিঃ, এসব কি ভাবছ ? তোমরা বেঁচে থাক। ঠাকুরের কত কাজ করবে। আমি বুড়ি হয়েছি, আর কতকাল বাঁচব !”