জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দমদমঃ- একে কি বলা যাবে রবীন্দ্রনাথের ‘নগরলক্ষী’ কবিতার ‘ভিক্ষুণী সুপ্রিয়া’র আধুনিক সংস্করণ যে অনায়াসে বলতে পারে – “আমার ভান্ডার আছে ভরে ভরে/ তোমা সবাকার ঘরে ঘরে/ তোমরা চাহিলে সবে/ এ পাত্র অক্ষয় হবে”। তাইতো নিজের আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেও অনায়াসে দুস্থ শিশুদের পাশে বারবার দাঁড়াতে পারে, তাদের মলিন মুখে অমলিন হাসি ফোটাতে পারে।
এদিকে পুজো এগিয়ে আসছে। পুজোর সময় আদরবাসার আদরের শিশুদের নতুন জামাকাপড় এখনো সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। দুশ্চিন্তায় কালো মেঘ জমেছে তাদের ‘মানসমাতা’ অর্পিতা ইন্দ্রের মনে। সামান্য বেতনের টাকায় কিভাবে শিশুগুলোকে নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়া যাবে? ওরাও তো বসে আছে কিছু পাওয়ার আশায়। নিজের জন্মদাত্রী মায়ের অভয়বাণী ‘চিন্তা করিস না, ঠিক জুটে যাবে’ শুনেও মন শান্ত হয়না। মানসিক কষ্ট যখন জগদ্দল পাথরের মত বুকের উপর ধীরে ধীরে চেপে বসছে ঠিক তখনই সান্তা ক্লজের মত এগিয়ে এলেন ওরা – অভিজিত বসু, মৃগাঙ্ক সাহা, অঞ্জলি সাহা, ঝুমা দাস, দেবাশিষ দাস, মধুমিতা ইন্দ্র, সুভাষ নাহা বিশ্বাস প্রমুখ। আদরবাসার মা, বাবা ও তার বাচ্চাদের জন্য পুজোর জামা ও টিফিনের ব্যবস্থা করলেন। হাসি ফুটে উঠল সবার মুখে। সবার মত ওরাও পুজোর সময় পড়তে পাবে নতুন জামাকাপড়।
গত কয়েকবছর ধরে উত্তর দমদমের শরৎ বসু রোডের শরৎ কলোনির বাসিন্দা অর্পিতা ইন্দ্রের মানসকন্যা ‘আদরবাসা’-র নাম মানুষের হৃদয়ে গেঁথে গেছে। লক ডাউনের সময় নিজের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে মা-মেয়ে জুটি এলাকার গুটিকয়েক দুস্থ শিশুর পাশে দাঁড়ায়। তাদের ‘হার্ট টাচিং’ কাজে মুগ্ধ হয়ে ধীরে ধীরে বহু মানুষ তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই নিজের ছেলেমেয়েদের জন্মদিন, পিতা-মাতার বাৎসরিক পারলৌকিক কাজ অথবা অন্য কোনো ছোট্ট ঘরোয়া উৎসব আদরবাসার শিশুদের সঙ্গেই পালন করেন। সেদিন তো শিশুগুলোর আলাদা আনন্দ। এমনকি যারা আসেন তারাও শিশুদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন।
ঐসব সান্তাক্লজ রূপী সহৃদয় মানুষের সহযোগিতায় আপাতত প্রায় পঞ্চাশ জন দুস্থ শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পুজোর নতুন পোশাক। কয়েকজন অসহায় বয়স্ক মানুষও সেই পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলোনা। ইতিমধ্যে আরও কিছু নতুন পোশাক পাওয়া গেছে। দু’একদিনের মধ্যে সেগুলোও তুলে দেওয়া হবে দুস্থদের হাতে। জানা যাচ্ছে পুজোর প্রাক্কালে আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় এলাকার কিছু দুস্থ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে চাল, ডাল, সয়াবিন সহ কিছু খাদ্য সামগ্রী যাতে পুজো চারদিন তারা খাবারের চিন্তায় অস্থির না হয়ে ওঠে। আরও জানা যাচ্ছে জনৈক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ঐসব ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একদিন পিকনিকের আদলে খাবারের ব্যবস্থা করবেন এবং নিজেও সেই আনন্দ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।
অঞ্জলি দেবী বললেন – আমাদের এলাকার একটি মেয়ের পাশে যদি আমরা এসে দাঁড়ায় তাহলে কিছু অসহায় শিশু তো একটু খাবার পাবে। সেই ভাবনা থেকেই আমরা অর্পিতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের সবচেয়ে ভাল লাগে ও নিজের হাতে কিছু নেয়না, সব আমাদেরকেই বিতরণ করতে হয়। এটা এক অন্যরকম অনুভূতি। প্রত্যেকেই কিন্তু একই কথা বললেন।
যার উদ্যোগে এতকিছুর আয়োজন সেই অর্পিতা ইন্দ্র বললেন – আমি খুব সাধারণ মানুষ। ব্যক্তিগত ভাবে দু’একজনের বেশি শিশুকে সাহায্য করার মত আর্থিক সামর্থ্য আমার নাই। তবে যেভাবে এলাকার সহৃদয় মানুষ আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং আদরবাসাকে নিজেদেরও বাসা ভেবেছেন তাতে আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।