eaibanglai
Homeএই বাংলায়চোরাই বালির কারবারে হরিহর আত্মা পুলিশ ও মাফিয়া দুর্গাপুরে

চোরাই বালির কারবারে হরিহর আত্মা পুলিশ ও মাফিয়া দুর্গাপুরে

নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- গ্রীন ট্রাইবুনালের নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রকাশ্য দিনের আলোয়, এই বর্ষাকালেও অবৈধ উপায়ে অজয় নদ থেকে দেদার বালি চুরি করে তা পাচার করা হচ্ছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। রাজ্য প্রশাসন কড়া মনোভাব দেখালেও বালি চুরি এখনও অব্যাহত। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সন্নিকটে মলানদিঘি অজয় নদের শিবতলা ঘাট থেকে দেদার বালি উত্তোলন হচ্ছে প্রকাশ্য দিনের আলোয়। আর সেই অবৈধ বালি দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে প্রবেশ করছে নির্দ্বিধায়।

স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গেছে মলানদিঘি অজয় নদের শিবতলা ঘাট থেকে এই দেদার বালি চুরির মূল পান্ডারা হলেন জনৈক ‘অজয়’ , ‘জীবন’ ও ‘হিরণ’ নামক কুখ্যাত বালি মাফিয়ারা। এদের প্রত্যেকের নামে অবৈধ বালি চুরি, বালির চালান জাল করা ও অস্ত্রসহ অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হওয়ার নজির রয়েছে। মলানদিঘি এলাকার মানুষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই তিন কুখ্যাত বালি মাফিয়া। বেপরওয়া অবৈধ বালি বোঝাই গাড়ী যাতায়াতে ভেঙে পড়ছে গ্রামের রাস্তা। অতীষ্ঠ সাধারন পথচলতি মানুষ থেকে স্কুল পড়ুয়ারা। ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। অবৈধ বালি উত্তোলনের জেরে বদলে যাচ্ছে নদীর গতিপথও। ভেঙে পড়ছে নদীর পাড়। বিপন্ন হচ্ছে কৃষিজমি। দিনভর গ্রামের রাস্তায় বেপরওয়া ট্রাক্টর যাতায়াতে ঘুম ছুটেছে এলাকাবাসীর। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রামের রাস্তায় যেভাবে বালির গাড়ী যাতায়াত করছে, তাতে বড় ধরনের যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পাড়ার রাস্তায় অনেক সময় ছেলেমেয়ের খেলাধুলা করে। তাতে অসাবধানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সবক’টি বালি ঘাটের রাস্তার ওপর প্রাইমারি ও হাইস্কুল রয়েছে। গ্রামের একমাত্র সদর রাস্তা। তাই স্কুল পড়ুয়া থেকে সাধারন মানুষের সবসময় যাতায়াত। বেপরওয়া বালির লরি, ডাম্পার যাতায়াতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী।

গতকাল সকালে স্থানীয় বিধাননগর পুলিশ ফাঁড়ির অন্তর্গত রাঙ্গামাটি এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা একটি বালিবোঝাই ট্রাক্টর ট্রলিকে আটক করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ অবৈধভাবে বালি পাচার করা হচ্ছিলো ওই ট্রাক্টর ট্রলিতে করে। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই গাড়ির বৈধ চালান দেখতে চাইলে কিছুই দেখাতে পারেননি গাড়ির চালকসহ আরো দুজন কর্মী। স্থানীয় বাসিন্দারা বিধাননগর পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দিলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ। তখনই কিছু সংবাদকর্মীদের খবর দেওয়া হলে তারা ঘটনাস্থলে এসে নিউ টাউনশিপ পুলিশ স্টেশনের পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম বাবুকে টেলিফোন মারফত এখবর জানাতেই তৎক্ষণাৎ নড়েচড়ে বসে বিধাননগর ফাঁড়ির পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধাননগর ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আটক করে বালি বোঝাই ট্রাক্টর ট্রলিটিকে। সূত্র মারফত জানা গেছে বৃহস্পতিবার সকালে ওই অবৈধ বালি বোঝাই ট্রাক্টর ট্রলির কর্মীদের আদালতে পেশ করা হবে বিচারকের সামনে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ বালির গাড়ির সাথে থাকা ৩ জন কর্মী থাকলেও পুলিশ শুধুমাত্র একজন কর্মীকে আদালতে পেশ করছে। এবং রাত্রেই কোনো এক অজানা কারণে বিধাননগর ফাঁড়িতে অভিযুক্তদের আত্মীয়দের সাথে কোন এক গোপন রাফা করে দুই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ এলাকার বাসিন্দারা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিধাননগর পুলিশ ফাঁড়ির কাজ কর্মের ওপর। তাদের অভিযোগ বিধাননগর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের প্রত্যক্ষ মদদেই চলছে এই বালি চুরি। সূত্র মারফত জানা গেছে এই অবৈধ বালি চুরির শিল্পাঞ্চল এর এক পান্ডা দুর্গাপুর ইস্পাত নগরী বি-জনের বলাই নামক ব্যক্তি।

মলানদিঘি অজয় নদের শিবতলা ঘাট থেকে প্রায় প্রতিদিনই ৭০- ৮০ টি ট্র্যাক্টর ট্রলি তে অবৈধ বালি বোঝাই করে তা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মলানদিঘি হয়ে কালিগঞ্জ, আরা মোড় দিয়ে প্রবেশ করাচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। স্থানীয় কর্তাদের মাসিক একটি ট্রাক্টর বাবদ ৮০০০ টাকা করে গুনতে হয় এই বালি মাফিয়াদের। শুধু তাই নয় বড়কর্তাদের প্রতি ট্রাক্টর প্রতিদিন, প্রতি ট্রিপে ৪০০ টাকা করে সেলামি দিতে হয়। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে নাকা চেকিংয়ের নামে আরা মড়ে রয়েছে একটি নাকা চেকিং পয়েন্ট। সেখানে লাগানো রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা । কিন্তু মেঘের আড়াল থেকে মেঘনাথ কখন যে ক্যামেরার মুখ মাটির দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে ও কিছু ক্যামেরার সংযোগী কেটে দিয়েছে তা কারুর জানা নেই। প্রকাশ্য দিনের আলোয় যাতে আরা মোড়ের ওপর দিয়ে এইসব অবৈধ বালি ট্র্যাক্টর ট্রলি গুলি পার হতে সাধারণ মানুষ না দেখেন , সেই উদ্দেশ্যেই মেঘের আড়াল থেকে মেঘনাথের খাস চামচা মামড়া বাজারের ‘মনা’ এখন কালিগঞ্জ গ্রামের ভেতর দিয়ে গাড়ি গুলিকে পার করছে। প্রতিদিনই মেঘনাথের বালি চুরির মহাকাব্য রচনা করছে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে। আর দুর্গাপুরের জেলা প্রশাসন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি থাকা পুলিশ প্রশাসনের বড় কর্তারা সবই শিত ঘুমে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments