সংবাদদাতা,আসানসোলঃ- মহালয়ার ভোরে রেডিওতে যখন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্রপাঠের মাধ্যমে মা দুর্গার আগমনী বার্তা শরতের আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে , ঠিক তখন আসানসোলের বার্নপুরে ধেনুয়া কালীকৃষ্ণ যোগাশ্রমে শুরু হয়ে যায় মাতৃ আরাধনা। শুধু তাই নয়, মহালয়ার দিনে একে একে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমীর পুজো হয় ও মাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। এ যেন আবাহনেই বিসর্জনের সুর।
জানা যায় আগে আশ্রমের এলাকা জঙ্গলে ঢাকা ছিল। বাংলাদেশ থেকে আগত সন্ন্যাসী তেজানন্দ ব্রহ্মচারী কেদারনাথের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে আসেন এবং আনুমানিক ১৯৩৭ সালে আশ্রমটি তৈরি করেন। তারপর মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে ৭০-এর দশকে তেজানন্দ ব্রহ্মচারী মহালয়ায় কুমারী দুর্গার পুজো শুরু করেন। মা এখানে কুমারী হওয়ায় তাঁর রূপেও কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়। এখানে দুর্গা প্রতিমার সাথে গণেশ, কার্তিক, লক্ষী ও সরস্বতী থাকেন না। মায়ের সঙ্গে থাকেন তাঁর দুই সখী জয়া ও বিজয়া। এছাড়া অশুরদলনী দুর্গার দশটি হাত ও হাতে সমরাস্ত্র থাকলেও দেবীর সঙ্গে থাকে না কোনও মহিষাসুর। তাই এখানে মায়ের মুখে কোনও ক্রুদ্ধ ভাব থাকে না। বরং মৃন্ময়ী মূর্তিতে চিন্ময়ী মায়ের প্রশান্তির ছাপ ফুটে ওঠে। কুমারী দুর্গার এই বিশেষ রূপ এবং একদিনে বোধন থেকে বিসর্জনই কালীকৃষ্ণ আশ্রমের দুর্গাপুজোর প্রধান বৈশিষ্ট্য। সন্ন্যাসীর অবর্তমানে আশ্রমের এই পুজোর ভার কাঁধে তুলে নেন গ্রামবাসীরা।
আশ্রমের সেবাইতরা জানালেন, মায়ের স্বপ্নাদেশ অনুসারেই এই বিশেষ রীতিতে পুজো হয়। তবে পুজোর নিয়ম কানুনে কোনও ফারাক নেই। সাধারণ দুর্গাপুজোর নিয়মেই নবপত্রিকাকে স্নান করানো থেকে শুরু করে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর পুজো এবং দশমীর পুজো করে ঘটের সুতো কেটে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।