জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,উত্তর চব্বিশ পরগণাঃ- সদ্য কলেজের চৌকাঠে পা রেখেছে উত্তর চব্বিশ পরগণার দত্তপুকুরের অদিতি গাইন। মেরেকেটে বয়স হবে ১৭-১৮ বছর। এই বয়সী ছেলেমেয়েরা যখন সেজেগুজে প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে ঠাকুর দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখনও ঐ ছোট্ট মেয়েটা নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন।
অষ্টমীতে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে সে লক্ষ্য করে দেখে প্রত্যেক প্যান্ডেলে ডেঙ্গু সতর্কতা, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ ও অন্যান্য বিষয়ে সচেতনতামূলক ব্যানার থাকলেও সাপ বা বন্যপ্রাণী নিয়ে কোনোরকম সতর্কতা বা সচেতনতামূলক ব্যানার নেই। অথচ প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে মানুষের সঙ্গে সঙ্গে বন্যপ্রাণীও দরকার। বিষয়টি তার মনে যথেষ্ট স্ট্রাইক করে। কিছু একটা করার সে সিদ্ধান্ত নয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধান পরামর্শদাতা পিণ্টু হালদারকে সঙ্গে নিয়ে নবমীর সন্ধ্যায় সাপ ও বন্যপ্রাণী নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য উত্তর চব্বিশ পরগণার দত্তপুকুরের মিতালি সংঘের সামনে রীতিমত স্টল করে বসে পড়ে তারা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। স্হানীয় বনবিভাগও পোস্টার ও লিফলেট দিয়ে সহযোগিতা করে।
প্যাণ্ডেলে তখন উচ্চস্বরে বাজছে মাইক। সেই গানের আওয়াজকে ছাপিয়ে তারা চিৎকার করে প্যাণ্ডেলে আগত দর্শনার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছে কোন সাপ বিষধর, কোনটা বা নির্বিষ, সাপে কামড়ালে তার প্রাথমিক চিকিৎসা কি, সাপ ঘরে না ঢোকার জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সাপ, কচ্ছপ, শিয়াল, বেজি, বাঘরোল, বাঘডাস, বনবিড়াল, গন্ধ গোকুল, গোসাপদের কেন বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। সাপ যাতে না কামড়ায় তার জন্য কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে। তাছাড়া সাপ নিয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার তুলে ধরার চেষ্টাও তারা করে। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে বহু মানুষ তাদের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনে। অনেকেই বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্নও তাদের দিকে ছুড়ে দেয়। হাসিমুখে তারা তাদের প্রশ্নের উত্তরও দেয়। পুজোর সময় তাদের এই উদ্যোগে সাধারণ মানুষ খুব খুশী। অনন্ত সরকার, ছবি মণ্ডলরা তো বলেই ফেললেন – এই বাচ্চা মেয়েটার কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও বনবিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অদিতি বললেন – একজন বন্যপ্রাণী প্রেমী হিসেবে আমি দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে সাপ তথা বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছি। Live & let live হোক আমাদের মূলমন্ত্র। তার আক্ষেপ সাপ চেনার ক্ষেত্রে কাপড়ের ব্যানারে আঁকা ছবি ব্যবহার করে প্রত্যাশিত ফল পেতে কিছুটা সমস্যা হয়।প্রজেক্টর হলে অনেক ভালোভাবে বোঝানো যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো প্রজেক্টর কেনার মত আর্থিক সামর্থ্য তার নাই। সরকার বা কোনো সংস্হা যদি তাকে সাহায্য করে তাহলে তার পক্ষে কাজ করতে খুব সুবিধা হয়।
প্রসঙ্গত খুব অল্প বয়স থেকে সাপ তথা বন্যপ্রাণীদের প্রতি অদিতির একটা আলাদা উৎসাহ দ্যাখা যায়। এব্যাপারে তাকে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দেয় পিণ্টু হালদার। প্রথম প্রথম বিষধর সাপের সামনে মেয়েকে দেখে অদিতির মা-বাবা আতঙ্কিত হলেও এখন তারাও মেয়েকে উৎসাহ দেয়। তাদের বক্তব্য – মেয়ের পরামর্শে সবাই যদি উপকৃত হয় তাহলে তার থেকে মঙ্গলের কি আছে?