সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ– বাঁকুড়া জেলার অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বাঁকুড়া শহরের লালবাজারের মল্লেশ্বর কালী বাড়ির পুজো। কিন্তু এই পুজো আর পাঁচটা পুজোর থেকে একেবারে আলাদা। আর এই ব্যতিক্রমী পুজো নিয়ে কথিত আছে নানা কাহিনী।
মল্লেশ্বর কালী বাড়ির পূজো কমিটির সদস্যরা জানান এই পুজোর ইতিহাস বহু প্রচীন হলেও দেবী মূর্তি স্থাপন করে পুজো শুরু হয় প্রায় সত্তর বছর আগে। জানা যায় আগে যখন এই মন্দির এলাকায় কোনও জনপদ ছিল না তখন জঙ্গলের মধ্যে ওই স্থানে পঞ্চমুণ্ডির আসন তৈরি করে সাধনা করতেন শ্রী শ্রী হরিহর দাস বাবা নামে এক সাধক। যিনি বাকসিদ্ধ সাধক ছিলেন। ওই জঙ্গলের সংলগ্ন এলাকায় ছিল ডাকাতদের গ্রাম। একদিন ডাকাত দল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে হরিহর বাবাকে হুমকি দিয়ে যায় যদি তারা ডাকাতি করে কিছু না পায় তাহলে ফিরে বাবার ব্যবস্থা করবে। অদ্ভুদভাবে সত্যি সেদিন ডাকাত দল খালি হাতে ফেরে এমং শ্রী শ্রী হরিহর দাস বাবাকে সায়েস্তা করতে তরোয়াল নিয়ে তাঁর উপর চড়াও হয়। সেই সময় পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে ধ্যানমগ্ন ছিলেন বাবা। আশ্চর্যজনকভাবে ডাকাতদের তলোয়ারের আঘাত তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। এরপরই ডাকাতেরা তাঁর স্মরণাপন্ন হয় এবং তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু শ্রী শ্রী হরিহরি দাস বাবা এই ধরাধাম ত্যাগ করার পর তাঁর তৈরি ও পরিত্যক্ত ওই পঞ্চমুণ্ডির আসনে অনেকে সাধনার চেষ্টা করে ও বিফল হয়। গ্রামবাসীদের দাবি ওই আসনে বসে সাধনা করতে গিয়ে অনেকেই পাগল হয়ে গেছেন আবার অনেকে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর প্রায় সত্তর বছর আগে ওই আসনের উপর মল্লেশ্বরী কালী প্রতিষ্ঠিত করে পুজো শুরু করেন স্থানীয়রা।
তবে এখানে মা কালী পূজিত হন বৈষ্ণব মতে। তাই নেই বলির প্রচলন। পাশাপাশি শ্রী শ্রী হরিহরি দাস বাবার নির্দেশ অনুযায়ী এই পুজোয় বাজে না ঢাক বা কোনও বাদ্য। এখানের মায়ের পুজো হয় ঘণ্টা ও শঙ্খ ধ্বনির মধ্যে দিয়েই। নিত্য পূজার পাশাপাশি কালী পুজোর দিন এখানে বিশেষ পূজা হয়। প্রতিবছর এই বিশেষ পুজো দেখতে ভিড় জমান আশেপাশের কয়েক হাজার মানুষ, দাবি পুজো কমিটির।